আমেরিকা: এইচআইভি আক্রান্তদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া

2271126848_2458a89644_mলম্বা সময় ধরে আমেরিকায় ভ্রমণ ও অভিবাসন ক্ষেত্রে যারা এইচআইভি আক্রান্ত বা এইডস এর জীবাণু বহন করছে এমন বিদেশী নাগরিকদের উপর এক নিষেধাজ্ঞা বজায় রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার জন্য গত সপ্তাহে আমেরিকার সরকার এক চুড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে।
বর্তমান নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে, এইচআইভি আক্রান্ত বিদেশী নাগরিক, তা সে পর্যটক বা ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারবে না। যদিও ব্যতিক্রমি ঘটনায় ছাড় দেওয়া হয়। এই নীতি আমেরিকায় ১৫ বছর ধরে প্রযোজ্য। যে সমস্ত অভিবাসী আমেরিকার বৈধ নাগরিক হতে চায় তাদের নাগরিকত্ব অর্জন করার পথে বাধা হয়ে রয়েছে এই আইন। এর কারন আমেরিকার স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগ বা ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস-এর এক তালিকা(এইচএইচএস)। এই তালিকার মধ্যে রয়েছে এইচআইভি। আমেরিকার জনস্বাস্থ্য বিভাগ একে পরস্পরের যোগাযোগ-এর মাধ্যমে ছড়ানো একটি রোগ হিসেবে দেখে। এই ধরনের রোগ জনস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। এর ফলে এই রোগে আক্রান্ত লোকদের আমেরিকায় প্রবেশে মানা ছিল। কিন্ত গত সপ্তাহে এইচএইচএস একটি প্রস্তাবিত নীতিমালা জারী করেছে। এর ফলে এইচআইভিকে যোগাযোগের মাধ্যমে বা মানব সংর্স্পশের মাধ্যমে ছাড়ানো রোগের তালিকা থেকে আলাদা করা হবে ।

অনেক সক্রিয় কর্মী এবং ব্লগার এই নিষেধাজ্ঞা অপসারনের প্রশংসা করেছে। যখন এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয় তৎক্ষনাত এসপায়ারি মিডওয়াইফের ব্লগার এরিন বলেছেন:

“এটা বন্ধ করতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময় নিল। সরকার অবশেষে এক ভয়ংকর বৈষম্যমুলক আইন পাল্টে ফেলতে শুরু করলো। এই আইন যা ২০ বছর ধরে প্রচলিত ছিল”।

তবে, এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করার প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয় গত বছরের জুলাই মাসে, সে সময় রাষ্ট্রপতি জর্জ. ডাব্লিউ. বুশ এক সংশোধনী আইনে স্বাক্ষর করেন। যা কিনা এই নিষেধাজ্ঞাকে বাতিল করার কথা ছিল। কিন্তু এইচআইভি আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল কারন, এইচআইভি এখনো আমেরিকার স্বাস্থ্যবিভাগের যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়ানো রোগের তালিকায় রয়েছে। ফলে আমেরিকার সরকার যাদের এইচআইভি রয়েছে তাদের সেদেশে প্রবেশে বাধা দেয়। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় গতমাসে এইচআইভিতে আক্রান্ত বৃটেনের নাগরিক ও সক্রিয় কর্মী বা এক্টিভিস্টস পল থর্নকে আমেরিকার সরকার ভিসা দিতে অস্বীকার করে। পল সিয়াটলে অনুষ্ঠিত এক সভায় অংশ নেবার জন্য আমেরিকায় প্রবেশ করতে চেয়েছিল। এই ভিডিও এ নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানাবে।

যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাদের এইচআইভি রয়েছে তাদের ভ্রমণ অথবা অভিবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আমেরিকা সে সমস্ত দেশের মধ্য অন্যতম, যারা এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা নীতির প্রচলন রেখেছে। আমেরিকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে তাদের বাধা রয়েছে। ব্লগ ডিইয়াম সাম বিস্তারিত জানাচ্ছে:

“একটা কৌতুহলজনক আলাদা নোট: সারা বিশ্বে প্রায় কেবল এক ডজনের মতো রাষ্ট্র এখনও এইচআইভি আক্রান্ত ব্যাক্তিদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী রেখেছে। দেশগুলো হলো ইরাক, চায়না, সৌদি আরব, লিবিয়া, সুদান, কাতার, ব্রুনাই, ওমান, মলদোভা, রাশিয়া, আর্মেনিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়া। যদি আপনার প্রয়োজন থাকে তাহলে আবার তালিকাটি পরে দেখুন এবং চিন্তা করুন ওই সমস্ত দেশের সমস্যা কি”।

আমেরিকায় প্রবেশের ব্যাপারে অথবা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে এই সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় ব্লগাররা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিয়েছে। যদি প্রবেশ বা ভ্রমণে বাধা আসে তাহলে তার পরিকল্পনা কি হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কানাডার এক ব্লগ দি এভুলুশন অফ জেরিমিয়া বলছে:

“আমেরিকায় প্রবেশ করতে আমার কখনই সমস্যা হয়নি। কেউ আমকে প্রশ্ন করেনি এবং কারো কোন কিছু জানার প্রয়োজন হয়নি। সারা বিশ্বের ভ্রমণকারীদের জন্য তা একটা সুসংবাদ। আশা করি দেরী করার চেয়ে শীঘ্রই এই আইন কার্যকর হবে”।

কুয়েরটি নামের ব্লগ পোস্টে ববিটো এক মন্তব্য করেছে । তিনি ব্যাখা করেছেন যে সমস্ত পরিকল্পনা এইচআইভি আক্রান্তরা গ্রহণ করে:

“আমি যা বলছি, যদি তারা [আমেরিকার কাস্টমস] ভ্রমণকারীদের ব্যাগে এইচআইভি প্রতিষেধক পায় তাহলে তারা সেই ব্যাক্তিকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেবে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে না পরারও উপায় রয়েছে। যেমন আমেরিকা যাত্রা করার আগে সেখানকার কোন বন্ধুকে চিঠি লেখা এবং আমি মনে করি এইচআইভি আক্রান্তদের সমর্থনে সেখানে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছ যারা এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে।

আমি আরো পড়েছি যে, তারা তন্ন তন্ন করে ব্যাগ খোঁজে এবং যদি প্রতিষেধক পায় তাহলে তারা ভ্রমণকারীর পাসপোর্টে এইচআইভির সিল লাগিয়ে দেয়, তারা সকল ভাবে চেষ্টা করে যাতে ভবিষ্যতে ভ্রমণকারীর সে দেশে ভ্রমণ নিষিদ্ধ হয় যা এইচআইভি+ এর জন্য প্রযোজ্য। রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিদের সে দেশে ভ্রমণ তখন অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না তা কোথায় পড়েছি”।

হিউম্যান রাইট ওয়াচ জুনে এক রিপোর্ট প্রকাশিত করে। কিভাবে এই নীতি এইচআইভি অভিবাসীদের্ উপর প্রভাব ফেলে, এই রিপোর্ট ছিল তার উপর। এম্পায়ারেমন্ট ফর এইচআইভি পজেটিভ মাইগ্রেন্ট এন্ড স্পাউজ বা এইচআইভিতে আক্রান্ত রয়েছে এমন অভিবাসী ও তার স্বামী বা স্ত্রীর অধিকার বৃদ্ধি নামের এক ব্লগ রয়েছে । এই ব্লগ-এর ভিত্তি মালয়েশিয়ায়। তারাও আলোচনা করেছে যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কিভাবে নির্ধারন করা হয়, তার উপর। এটি বর্ণনা করছে,

“পিএলএইচআইভি [পিপল লিভিং উইথ এইচআইভি বা যে সমস্ত লোক এইচআইভি রোগে আক্রান্ত] আক্রান্ত লোকদের ক্ষেত্রে এখনো ভুল ধারণা এবং ভ্রান্ত বিশ্বাস বা সংস্কার রয়েছে যা তাদের উপর এক চাপ তৈরী করে। ধারণা রয়েছে যে সমস্ত লোক পিএলএইচঅআইভিতে আক্রান্ত তারা ভ্রমণের সময় চিকিৎসা(এআরটি) নেওয়া বন্ধ করে দেয়, যাতে তাদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা তৈরী না হয়। এই পদক্ষেপ চিকিৎসা বন্ধের অন্যতম কারন হয়ে দাড়ায়….

….. সকল দেশকে মনে রাখতে হবে যে তারা জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্যনীতি বা ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনে স্বাক্ষর করেছে। এই নীতি কোন রোগকে আলাদা করে দেখে না। এর মধ্য এইচআইভিও রয়েছে। এই নীতি অবশ্যই সকল দেশে চিকিৎসা সুযোগ যতটা সহজলভ্য হয় তার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। প্রভাবক দেশ, যেমন আমেরিকা এবং চীনের অবশ্যই এ ব্যাপারে নেতৃত্ব গ্রহণ করা উচিত এবং অন্য দেশের জন্য তাদের একটা ভালো ভুমিকা থাকা উচিত, যখন তারা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে”।

এখন এইচএইচএস তাদের প্রস্তাবিত নীতি পোস্ট করেছে। এখানে ৪৫ দিন ধরে জনগণ মন্তব্য করতে পারবে, যা শেষ হবে আগস্টের ১৭ তারিখে। যদি এই নীতি মন্তব্য করার পর গ্রহণ করা হয়, তাহলে তাদের প্রয়োগ করতে হবে। কখন এর চুড়ান্ত প্রয়োগ করা শুরু হবে তা এখনও জানা যাচ্ছে না। কিন্তু কিছু সক্রিয় কর্মী বা এক্টিভিস্ট আশা করছে এটা বছরের শেষ দিকে প্রয়োগ করা হতে পারে। ব্লগ ডিইম সাম বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলে এবং নতুন নীতি প্রয়োগ হলে সকলেই তাতে লাভবান হবে।

“এটি জিএলবিটিকিউ[ গে বা পুরুষ সমকামী, লেসবিয়ান বা মহিলা সমকামী, বাইসেক্সুয়াল বা উভয়কামী, ট্রান্সজেন্ডার বা লিঙ্গ পরিবর্তনকারী, এবং যাদের জীবন যাপন অস্বাভাবিক বা প্রশ্ন তৈরী হয় এমন] সম্প্রদায়ের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু- কোন প্রশ্ন না করা – সমান গুরুত্বপূর্ণ। অন্য সব বিষয়ের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে এ সব বিষয় আলোচনা করা উচিত। অবশ্যই কোন কিছুই না বলেই বলা যায়, জিএলবিটিকিউ সম্প্রদায় যে কেবল এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেবার সুবিধা পাবে তা নয়, সারা বিশ্ব এই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেবার ফলে সুবিধা লাভ করবে”।

দাড়ানো উড়োজাহজের ছবি ফ্লিকারে থেকে নেওয়া যা স্টিভেন ফার্নানদেজ-এর তোলা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .