দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য বছরের এই সময়ের গরম নতুন কিছু না। কিন্তু সাম্প্রতিক শুষ্ক আবহাওয়া এই অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হতে দেয় নি তাই তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। আর বিদ্যুতের সংকটের কারনে লোডশেডিং বেশ কয়েকটি দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন দূর্বিষহ করে তুলেছে।
গত শুক্রবার (এপ্রিল ২৪, ২০০৯), এই গ্রীষ্মের সব থেকে গরম দিন ছিল (৩৮.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার জন্য। ভারতের পূর্বাঞ্চলে লোকজনের প্রায় দম আটকিয়ে যাচ্ছে যখন তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উঠছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি মৃত্যুর খবর এসেছে। পাটনার চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছেন খাঁচার পশুদের গরম থেকে রক্ষার জন্য। নেপালে বনে আগুন ধরে গেছে , আর সব সময় বৃষ্টি হয় এমন জায়গায় অনাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
নেট অধিবাসীরা এই পরিস্থিতিতে জোড়ালোভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সুকন্যা এম “একসাথে আমরা ঘামি” পোস্টে লিখেছেন অসহ্য গরম আর লাগাতার বিদ্যুত চলে যাওয়া নিয়ে:
এটা অসহ্য।
তাপমাত্রা ৪০, ৪১ আর ৪১.৮ এর আশেপাশে থাকে সাধারণত আর আমাদের ভাগ্য যদি ভালো থাকে (যেমন আজকে) তাহলে ৩৯ ডিগ্রী। এর সাথে আদ্রতা- ইয়াহু অনুসারে আজকে ৮৪% (মনে হচ্ছিল ১০০%)। আর অবশ্য সর্বত্র বিদ্যুতের চলে যাওয়া আর অদ্ভুত ঘটনা – কলকাতায়, দমদম থেকে বেহালা পর্যন্ত রবিবার ৬-১০ ঘন্টা বিদ্যুত ছিলনা।
সাধারণ মানুষের মনোভাব তুলে ধরা কিছু টুইটার বার্তা:
কালামুর: গরমে গলে যাচ্ছি। #মুম্বাই এ আসলেই খুব গরম।
ভিত্রাগ: বিকালের গরমে মুম্বাইএর ট্রেনে উঠছি… আর মনে হচ্ছে যেন চুল্লিতে প্রবেশ করছি।
ইন্ডিয়া আনকাট ব্লগের অমিত ভার্মা উপহাস করেছেন:
বোম্বেতে এতো গরম…যে আমি যখন আমার মাইক্রোওয়েভে খাওয়ার গরম করি, এটা বাইরের চেয়ে ঠান্ডা হয়ে বেরিয়ে আসে।
বাংলাদেশে মানুষ খারাপভাবে ভুগছে তাপপ্রবাহ আর বিদ্যুতের আসা যাওয়ায়। বেশীরভাগ লোকের ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র নেই। তারা বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে, যেটা বিদ্যুত না থাকলে কোন কাজে দেয় না। যারা আইপিএস কিনতে পারেন তারা যথেষ্ট বিদ্যুত পাননা তা রিচার্জ করতে। আরো খারাপ হলো, পানির পাম্প চালানোর মতো যথেষ্ট বিদ্যুত নেই। পানির সংকট চরম আকার ধারন করেছে আর মানুষ পানির ঘাটতি নিয়ে বিক্ষোভ করছে।
টুইটার থেকে:
ডিকেহল৪৪: ঢাকায় লোডশেডিং এখন অদ্ভুত পর্যায়ে। প্রত্যেক ঘন্টায় বিদ্যুত বন্ধ হচ্ছে। আর এখন ৩৮ ডিগ্রী।
শাহরিয়াজ: ঢাকায় সন্ধায় কাজ করা বেশী বাস্তবসম্মত মনে হয়, কাজের সময়ের ৬ ঘন্টা লোডশেডিং এর কোন মানে হয় না।
বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ অনলাইনে বিদ্যুত চলে যাওয়ার সময়সূচি দিয়েছেন। লাইফ এন্ড ওয়ার্ক ইন ঢাকা সিটি ব্লগের বার্নি এলেন ঢাকার বিদ্যুত সংকটের কারন নিয়ে লিখেছেন:
চাহিদা হচ্ছে ২০০০ মেগাওয়াট আর সপ্তাহের একদিনে আমাদেরকে দেয়া হয়েছিল ১২০০ মেগাওয়াট, তাই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে হয়েছে।
নেপালে, বিদ্যুত সংকট এখন একটু ভালো হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৪-১৬ ঘন্টা লোডশেডিং এর পরিমাণ এখন কমেছে। টুইটার থেকে:
জিকমে: দেশ বিদ্যুত সকটের মুখোমুখি আর এটা থেকে বেরিয়ে আসতে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন ১২ ঘন্টা লোডশেডিং আরোপ করেছে।
গেশান্স ব্লগ কাটমন্ডুর লোডশেডিং এর সময়সূচি পোস্ট করে মানুষের কষ্টের কথা বলেছেন।
পাকিস্তানের করাচী শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা অঘোষিত বিদ্যুত বন্ধের সম্মুখীন হচ্ছেন। পাকিস্তান ডেইলি ফটো ছবি পোস্ট করেছে মানুষ কিভাবে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া অসহ্য গরমের সাথে খাপ খাওয়াচ্ছেন।
দক্ষিণ এশিয়া এর থেকেও চরম তাপপ্রবাহ দেখেছে। কিন্তু বিদ্যুতের সংকট মানুষের এর সাথে খাপ খাওয়ানোর সঙ্গতিকে খর্ব করেছে। বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তি না আনা পর্যন্ত মানুষ ভুগবে।
ঢাকা থেকে গরমে অসহ্য হয়ে ব্লগার কৌশিকের উপদেশ:
সরকারের এখন বিদ্যুৎ এর বদলে বৃষ্টি উৎপাদনের চেষ্টা করা উচিত
যদিও এটা অসম্ভব মনে হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ এই ধারণাকে উপেক্ষা করতে পারেনা।
1 টি মন্তব্য
great it’s wonderful information. thanks for sharing