জিম্বাবুয়ে: মন্ত্রীদের অবকাশ কি দরকার ছিল?

জিম্বাবুয়ে পরিবর্তনের একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যার জন্য দরকার দেশের নীতিতে উদাহরণ দেয়ার মতো পরিবর্তন। এই বাস্তবতা বুঝতে পেরে জিম্বাবুয়ের জোটের সরকারী কমর্কতারা সম্প্রতি ভিক্টোরিয়া ফলসে মন্ত্রীদের অবকাশযাপনে গিয়েছিলেন যার লক্ষ্য ছিল স্বল্প মেয়াদী জরুরি অর্থনৈতিক চাঙ্গা করার প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তাদের জন্য একটি ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা বের করা।

জোট সরকার মনে করেছিল যে ভিক্টোরিয়া ফলে এই অবকাশ দরকার ছিল একটা নিরুদ্বেগ পরিবেশে সকল ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে নেতাদের পন্থা আর নীতি গঠনে মনোনিবেশের জন্য।

এই অবকাশ কি জনগণের টাকার অপব্যায় ছিল না কি জাতিকে আরোগ্যের পথে নিয়ে যাওয়ার দরকারী পদক্ষেপ ছিল? জিম্বাবুয়ের বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রফেসর জনাথন মোয়ো চিন্তিত ছিলেন যে এমন একটা অনুষ্ঠানের জন্য ব্যায়ভার কে বহন করছে যখন সরকার পর্যাপ্তভাবে আর সময়ানুযায়ী তাদের কর্মচারীকে বেতন দিতে পারছে না:

কেমন করে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু সরকার যে নিজের সরকারী কর্মচারীদের যথেষ্ট আর সঠিকভাবে বেতন দিতে পারেনা নিজেদের উপরে দুষ্প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রা ছিটাতে পারে ভিক্টোরিয়া ফলসের মতো দামি পর্যটক স্থানে এতো বেপরোয়া ভাবে?

এখানে অশুভ কিছু একটা হচ্ছে।

এটা নিশ্চিত যে ভিক্টোরিয়া ফলসে মন্ত্রীসভার এই অবকাশের খরচ সরকারী রাজস্ব থেকে বা এদের মাধ্যমে আসে নি আর এই একই ব্যাপার সত্যি বিভিন্ন সামিট আর ডিনারের ক্ষেত্রেও যা কিছু মন্ত্রী জোট সরকারের নামে বিগত কয়েক সপ্তাহে করেছেন।

কার্যত:, টাকা আসছে কোন দাতার কাছ থেকে যারা স্বচ্ছতার আর হিসাবের শিক্ষা দিয়ে থাকেন দিনের বেলা আর রাতে এর উল্টো করে থাকেন।

এইসকল দাতা যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাশ কাটিয়ে, কোনঠাসা করে আর সরকারী গঠনকে ছোট করে দেখতে সমান্তরাল ব্যবস্থা গড়ার পক্ষে। তারা কিছু জনপ্রিয় লোকের মাধ্যমে কাজ করছেন – যেমন জিল ডে আর এডি ক্রস, যারা সামিট আর মন্ত্রীদের ডিনার আয়োজন করতে কাজ করেছেন যা সরকারের নামে করা হয়েছে আসলে তাদের কোন সম্পৃক্ততা ছাড়া।

তানোনোকা ওয়ান্দে জিম্বাবুয়ে টাইমসে একটা প্রতিবেদনে লিখেছেন যার শিরোনাম, “এমডিসির ব্যাপারে ধীরে ধীরে ভীত হচ্ছি”। তিনি এই অবকাশকে ক্যাথোলিক পাদ্রীদের অবকাশের সাথে ব্যঙ্গ করে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন:

যখন ক্যাথোলিক পাদ্রীরা চাপের মুখে থাকেন আর বলবর্ধনের দরকার হয় তারা অবকাশে যায়। শোনা আর সকল পাপীর পাপ পার করার কাজ যেকোন পাদ্রীকে কাহিল আর ক্ষমতাহীন করে তোলে। মনে হচ্ছে জিম্বাবুয়ের জোট সরকারের কর্মকতারা এরই মধ্যে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন আর পূনর্জীবনের সন্ধানে ছিলেন, আর তাই ভিক্টোরিয়া ফলসে এই মন্ত্রীদের অবকাশ। অক্সফোর্ড ডিকশনারি যেমন বলে থাকে অবকাশ হলো “শত্রু পক্ষদের সাথে মুখোমুখি হওয়া থেকে পিছিয়ে যাওয়া”।

এটা ‘চুপচাপ বা গোপন কোন জায়গায় সরে যাওয়া’ বা কেবলমাত্র ‘একাকীত্মের সময় বা স্থান প্রার্থনা বা ধ্যানের’ হতে পারে। এই ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটা ভালো মেলে জানু-পিএফ আর এমডিসির ভিক্টোরিয়া ফলসে অবকাশটির? এটাকি প্রার্থনা বা ধ্যান ছিল; শত্রু পক্ষের সাথে মুখোমুখি হওয়া থেকে পিছিয়ে যাওয়া নাকি জিএনইউ রসালো ট্রেনের প্রথম থামা এটা? অফিসে আসার ৬০ দিনেরও কম সময়ে, জিম্বাবুয়ের জাতীয় একাত্মতার সরকারের কাজের ঘোড়ারা এতো ক্লান্ত যে তাদের অবকাশে যেতে হচ্ছে। আর তারা এটা করেছে ভিক্টোরিয়া ফলসে, জিম্বাবুয়ের সব থেকে দামী পর্যটক স্থানে। এই ধরনের মিটিং এর স্থান হিসাবে মাসাসা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা হারারের কোয়ালিটি ইন কেন বিবেচিত হয়নি? সপ্তাহান্তের অবকাশ, তারা এটাকে বলছে। সপ্তাহান্তে আসলে কি পাওয়া যাবে যা তারা দুইমাসে দিতে পারেনি?

তবে গিলবার্ট মুপোন্ডা মনে করেছেন যে এই অবকাশ দেশের আরোগ্যের জন্য জরুরী পদক্ষেপ ছিল:

ভিক্টোরিয়া ফলসে চলতে থাকা জিম্বাবুয়ের মন্ত্রীদের অবকাশ কনফারেন্স অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হওয়ার জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এটায় সাহায্য করেছে। এটা যেমন বোঝা যায় যে মানুষ রেগে আছে বড় পর্যটক আকর্ষণীয় এলাকায় এমন সমাবেশের জন্য এই সমাবেশ জাতীয় আরোগ্য প্রক্রিয়া আর জাতীয় একাত্মতা কোন কারনে গঠনের জন্য একটি অংশ হিসাবে কাজ করছে। রাজনীতিবিদদের পরিচালিত হতে হবে পরষ্পরের প্রতি সহিষ্ণু হয়ে আর এমন সমাবেশ দেখলে মানূষ বিশ্বাস করবে এমডিসি আর জানু-পিএফ আসলেই একসাথে বসতে পারবে জনাব থাবো এম্বেকি বা জনাব ইয়ান খামা দ্বারা জোর না করলেও আর আলোচনা করতে পারবে তারা কিভাবে নিজেদের দেশকে পুন:গঠন করতে চান আর নিশ্চিত করতে পারবেন যে তাদের অর্থনীতি যাতে পুনরুদ্ধার হয়।

জিম্বাবুয়ের নেতারা বিদেশী নেতা ছাড়া মিলিত হয়ে বা তাদের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে দেখাচ্ছেন যে জিম্বাবুয়েবাসীদের পক্ষে সম্ভব দেশের সমস্যা নিজেদের মতো সমাধান করার। বিদেশী আর প্রতিবেশীরা তাদের ভূমিকা পালন করেছে। এখন সময় জিম্বাবুয়েবাসীদের একে অপরকে কাজে নিয়োজিত করে আস্থা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করা যার ফলে আসবে স্বাভাবিক সামাজিক আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .