থাইল্যান্ডের “রঙ্গীন” প্রতিবাদকারীরা

লাল শার্ট, হলুদ শার্ট, নীল শার্ট, গোলাপী শার্ট, সাদা শার্ট, কমলা শার্ট, বেগুণী শার্ট, কালো শার্ট। আজকে আপনি থাইল্যান্ডে কোন শার্ট পরবেন সে সম্পর্কে সাবধান। কারন শার্টই পরিচায়ক আপনি কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের। একজন ব্লগার মন্তব্য করেছেন যে পর্যটকদের ফুলেল শার্ট পড়া উচিৎ স্পষ্ট করার জন্যে যে তারা এই দেশের কোন রাজনৈতিক শক্তিকে সমর্থন করছেন না।

মূল বিবাদকারী দুই দল হচ্ছে লাল শার্ট এবং হলুদ শার্ট। হলুদ শার্ট পিউপলস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসী দলের চিহ্ন। এবং ইউনাইটেড ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসী এগেইন্সট ডিক্টেটরশীপ দলের পরিচায়ক হচ্ছে লাল শার্ট। হলুদ শার্টরা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার কঠোর সমালোচক। থাকসিন ২০০৬ সালে একটি (রক্তপাতহীন) সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান। আর প্রায় সব লাল শার্ট থাকসিনের সমর্থক।

হলুদ শার্টের দল এই প্রতিবাদের রং পছন্দ করেছে রাজা ভুমিবল আদুলিয়াডের সম্মানে, যিনি এখনও থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সম্মানজনক ব্যক্তি। কিন্তু তার মানে এই না লাল শার্টের দল রাজার বিরোধিতা করছে। অথবা তারা যে বামপন্থী তাও সঠিক নয়। তারা লাল রং নির্বাচন করেছে হলুদ শার্টওয়ালাদের থেকে আলাদা হবার জন্যে।

এই হলুদ শার্টের দল গত বছর দুজন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল থাকসিনের পুতুল সরকার হিসেবে। সরকার পরিবর্তনের জন্যে চাপ দেয়ার জন্যে এই হলুদ শার্টের দল গত বছর আগষ্টে সংঘাতমূলক রাজপথের প্রতিবাদ শুরু করেছিল। তারা প্রধান সরকারী ভবন কয়েকমাস ধরে দখল করে রেখেছিল। এর পরে গত ডিসেম্বর তারা ব্যান্কক এয়ারপোর্টে অবস্থান ধর্মঘট করে সারা দেশের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়। থাকসিনের সমর্থকদের সরকার পরিচালনা রোধ করে একটি কোর্টের আদেশের পর তারা এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে (এই হলুদ শার্টের প্রতিবাদের জন্যে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কাভারেজ পাতা দেখুন)।

হলুদ শার্টরা বিজয় ঘোষণার কয়েকদিন পরেই লাল শার্টওয়ালারা তাদের রাজপথের প্রতিবাদ শুরু করে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে তারা প্রধান সরকারী ভবন দখল করে রেখেছে। ব্যান্ককে তারা হাজার হাজার লোক জড়ো করতে সক্ষম হয়েছিল। ট্যাক্সি চালকরা তাদের সমর্থন করে এবং তাদের ট্যাক্সি দিয়ে রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে (যেমন ভিক্টরি মনুমেন্ট) প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এই প্রতিবাদকারীরা সমর্থ হয় পাতায়াতে অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মিলনকে বন্ধ করে দিতে যা প্রধানমন্ত্রী অভিসিৎ ভেজাজিভার জন্যে দুর্নাম বয়ে আনে। ব্যান্ককে বর্তমানে জরুরী অবস্থা জারী রয়েছে কিন্তু লাল শার্টওয়ালারা এখনও অজেয় মনোভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে

লাল শার্টের দল সৈন্যদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া অস্ত্র দেখাচ্ছে। ছবি ফ্লিকার থেকে আরিন জের সৌজন্যে।

জনি ফরেইনার হলুদ এবং লাল শার্টওয়ালাদের মধ্যে সাদৃশ্যের কথা লিখেছেন:

হলুদ শার্টওয়ালারা দেশে অরাজকতা ডেকে এনে এবং প্রধান এয়ারপোর্ট বন্ধ করার মাধ্যমে চাপ দিয়ে তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছেুতে পেরেছে। তাই লাল দলও (যদিও ব্যন্ককের বাইরে থেকে তাদের সমর্থন আসছে) এই পথ অনুসরণ করে রাজধানীর কেন্দ্রকে অচল করে দিতে চাইছে। শহরের প্রধান রাস্তাগুলো বন্ধ তাই চলাচলে বেশ অসুবিধা হচ্ছে।

লাল শার্টের দল কারা? তারা কি চায়? হলুদ শার্টের দলের মতে তারা থাকসিনের অন্ধ ভক্ত। সিয়াম রিপোর্ট একটি রিপোর্ট তুলে ধরেছে যা এই ধারনাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে:

আরও সংবাদ আসছে যে অনেক লাল শার্টের দলের সদস্য স্বচ্ছল পরিবারের। তারদের নিজস্ব গাড়ী আছে এবং তারা শহরতলীতে থাকে। তারা সঠিক গণতন্ত্র চাইছে এবং রাজনীতির মাঠ ঘোলা করা অনির্বাচিত নেতৃত্বকে উপড়ে ফেলতে চাইছে। তবে তারা কিন্তু থাকসিনের ফেরত আসা চাইছে না কিংবা তার অন্ধ সমর্থক না। লাল শার্টের দল কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যে তারা “থাকসিনের খেলার পুতুল” – তা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে এরকমই ধারনা প্রচার করা হয়।

হলুদ শার্টের দল এখন আর সক্রিয় নয়। তবে লাল শার্টের দল এখন অন্য এক রঙ্গের দলের কাছ থেকে বাধা পাচ্ছে – নীল শার্টের দল। লাল শার্ট যখন সরকারের জন্যে হুমকি হয়ে দাড়ায় তখন এ্‌ই নীল শার্টের আবির্ভাব হয়। প্রথমে তারা বলে তারা শুধু জনসম্পদ রক্ষার্থে মাঠে নেমেছে, যেমন এয়ারপোর্ট। তবে লাল শর্টের দল অচিরেই তাদেরকে সরকারের ভাড়াটে হিসেবে অভিযোগ আনে। নির্মল ঘোষ এই নীল শার্ট এবং লাল শার্টের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখেছে যা নীল শার্টের পেছনে কারা আছে তা বুঝতে সাহায্য করে:

ভোর সকালে লাল শার্টের দল সামিটের স্থান রয়াল ক্লিফ রিসোর্টের পাহাড়ে ওঠা শুরু করে। কিন্তু তারা শতাধিক সরকার সমর্থক মিলিশিয়া দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাদের পরনে ছিল গাড় নীল টি-শার্ট যাতে লেখা ছিল ‘সরকারী প্রতিষ্ঠান রক্ষা কর’ – এখানে প্রতিষ্ঠান বলতে রাজতন্ত্র বোঝানো হয়েছে।

এইসব নীল শার্ট ওয়ালাদের হাতে লাঠি, ডান্ডা এবং লোহার রড ছিল। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয় দুটি স্থানে, প্রত্যেকটিতে প্রায় ১০০০জন লাল টি শার্টওয়ালা ১৫০ জন নীল শার্টের বিরুদ্ধে লড়েছে। নীল শার্টওয়ালাদের কাছে রাজা ও রাণীর ছবি ছিল।

নীল শার্টওয়ালারা, দৃশ্যতই ভাড়াটে মিলিশিয়া সেনাবাহিনীদের পেছনে অবস্থান নেয়, যারা তাদের নিরস্ত্র করতে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

দুটি সূত্র অনুসারে নীল শার্টের দলকে সংগঠিত করেছে পাতায়ার মেয়র যিনি এই প্রদেশের একজন বিতর্কিত ও প্রভাবশালী লোকের সন্তান।

থাই নাগরিক যারা এই সব সংঘাতের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত নয় তাদের প্রতিক্রিয়া কি? যখন লাল শার্ট ওয়ালারা আসিয়ান সামিট ভেনু থেকে চলে যাচ্ছিল তখন একদল কালো শার্ট পরিহিত লোকদের দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে পাথর ছুড়ে মারতে। এরা কারা ছিল?

অনেককে এইসব প্রতিবাদকারীদের ধাওয়া করতে দেখা গেছে। এই ভিডিওতে দেখা যাবে কিভাবে লাল শার্টের দলকে কিছু পথচারী ধাওয়া করছে:

মনে হয় অনেক থাইদের নিরপেক্ষ রঙ্গের শার্ট পড়াকেও একটি রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে ধরা যায়। টুইটারের মাধ্যমে অন্যান্য রঙ্গের শার্টের ব্যাপারে জানা যায়:

সজল: না তুমি দুই পক্ষের লোকের কাছেই মার খাবে। @জেমিমন্কের মেসেজ: আমি এখন থেকে কমলা শার্ট পড়ব এর জবাবে।

স্টিকম্যানব্যন্কক: লাল শার্ট, হলুদ শার্ট কোনটিই না। আমি সাদা শার্ট পড়ব।

থাইক্যাম: এক বন্ধু বলছে – মনে হয় একন সময় এসেছে লাল আর হলুদ মিলিয়ে বেগুণী শর্টের দল তৈরি করার যারা দেশের জন্যে লড়বে, ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে নয়।

ব্যান্কক প্যাস্টর: হুলুদ শার্ট, রাল শার্ট আর এখন নীল শার্ট? অচিরেই মনে হয় পড়ার মত নিরপেক্ষ রং আর থাকবে না।

টিব্যারেট: আমি ব্যান্ককে অনুষ্ঠিতব্য কালকের প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ে চিন্তিত। লাল শার্ট না হলুদ শার্ট কে এই মূর্খের লড়াইয়ে জিতবে?

গ্রেগজর্গেনসেন: মজা লাগে দেখতে কিভাবে লাল আর হলুদ উভয় শার্টের দলই গণতন্ত্রের কথা বলতে মুখে ফেনা তোলে। কিন্ত নির্বাচন তাদের সপক্ষে না গেলে তারা তা মানতে রাজী নয়।

পিটি৭৮৯: এর আগেরবার হলুদ শার্ট শহর দখল করেছিল। এখন লাল শার্টের পালা। তারা এই রাজনৈতিক পিংপং খেলা কখন থামাবে?

থাইদের আরেকটি সুযোগ রয়েছে – গোলাপী শার্ট পড়া। এই গোলাপী শার্টের দল রাজনৈতিক নেতুত্ব চায় ভালবাসার নীতির উপর ভিত্তি করে। পপতারকা জিনতারার একটি মিউজিক ভিডিও আছে ‘মপ সি চুম পু’ নামে যা গোলাপী শার্টের জয়গান গায়।

শেমলেস ম্যাক পর্যটকদের শুধু ফুলেল শার্ট পড়ার উপদেশ দিয়েছেন:

সত্যিই পরিস্থিতি খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে, কাল কি ঘটবে কিছুই বলা যায় না। লাল শার্টের দল বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। তবে হলুদ তদল যারা গত নভেম্বর/ডিসেম্বরে বিমানবন্দর অচল করে দিয়েছিল তারা এখনও সেভাবে মাঠে নামে নি। নীল শার্টের দলের মাঠে নামা ভাল লক্ষণ নয়। তারা আরও মারাত্মক কারন তারা সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে।

তাই একটি উপদেশ: দয়া করে কোন গাঢ় রংয়ের শার্ট পরে রাস্তায় যাবেন না। লাল এবং হলুদের রাজনৈতিক পরিচয় খুব প্রকট। এখন নীলও আরেকটি দল। কে জানে কালকে আবার কোন রং নতুন কোন দলের পরিচায়ক হয়ে ওঠে।

কি করবেন? শুধু ফুলেল শার্ট সুটকেসে ভরেন।

থাম্বনেইল ইমেজটি নেয়া হয়েছে ফ্লিকার ব্যবহারকারী ওয়াই নটের সৌজন্যে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .