বাংলাদেশঃ নির্বাচন শেষ, এখন প্রতিশ্রুতি রাখার সময়

২৯এ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশের নবম সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হল। সমরেশ বৈদ্য লিখেছেন :

অনেক ত্যাগ, সংগ্রামের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ বাংলাদেশের নাগরিকরা নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে তাদের অন্যতম নাগরিক অধিকার অর্থাৎ নিজেদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অধিকার ফিরে পেয়েছে। … দেশি-বিদেশী অধিকাংশ সংগঠন ও মানুষের কাছে নির্বাচনটি হয়েছে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু।

নিরপেক্ষ ও অবাধ ঘোষিত এই নির্বাচনে রেকর্ড ৮৭% ভোট পরেছে। বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে অনেক আশা, ব্যতিব্যস্ততা ও আগ্রহ দেখা গেছে। তারা যে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশকে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি অধিষ্ঠিত সামরিক বাহিনী সহায়িত কেয়ারটেকার সরকারের হাত থেকে গনতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত করেছ তার নমুনা পাওয়া যায় এই পরিসংখ্যান থেকে : ৮১ লক্ষ নিবন্ধন‌কৃত ভোটারের মধ্যে ৩১% ভোটার (বয়স ১৮-২৫) প্রথমবার ভোট দিয়েছেন এবং ৫১% মহিলা ভোটার এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের সেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীণ মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের (৩০০র মধ্যে ২৬৩ আসন) বার্তা নিয়ে আসে। এর মধ্যে  আওয়ামী লীগের নিজেরই পাওয়া ২৩০টি আসন। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন।

এটা পরিস্কার হয়ে গেছে যে মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছে। মানুষের এই আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে ব্লগার সেরীফ আল সায়ারের, হাসিনাকে লেখা এই খোলা চিঠির মধ্যে।

প্রিয় নেত্রী,
শুরুতেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীণ মহাজোটের এই নিরঙ্কুশ বিজয়ে অভিনন্দন জানাই সাথে ইংরেজী নতুন বর্ষের শুভেচ্ছা। বাংলার জনগণ বিগত সরকারের দূর্নীতি, দুঃশাসন, হটকারীতা এবং এই সকল অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানালো। এবং সেই প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আপনার উপর আপনার দলের উপর আস্থা জ্ঞাপণ করল। আশা করি সেই জনগণকে আপনি ক্ষমতার দম্ভে পড়ে ভুলে যাবেন না। সেই জনগণের পাশে আপনি এবং আপনার সরকার নিরপেক্ষভাবে সব-সময় পাশে থাকবেন। এমনটাই আমরা আশা করি। …আমি বর্তমান প্রজন্মের একজন ভোটার ছিলাম। এই বার প্রথম ভোট দিয়ে নিজের নাগরিকত্ব অধিকার এবং আমার দায়িত্ব পালন করেছি। এবং সেই অধিকারের মাধ্যমে আমার মতো আরো লক্ষ নতুন ভোটার আপনার কাছে এবং আপনার মহাজোটের কাছে দেশের দায়িত্ব অর্পণ করলো। তাই আমি যেটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, এই বিজয়কে ক্ষমতা ফিরে পাবার বিজয় মনে না করে দায়িত্ব ফিরে পাবার বিজয় মনে করার অনুরোধ থাকলো।

আমার মতো অসংখ্য নতুন ভোটার আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। প্রত্যাশা করে, যেই দিন বদলের চেষ্টার কথা আপনি বলেছেন সেই দিন সত্যি সত্যিই বদলাবেন। তারা চায় একটি হানাহানির রাজনীতিমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত, দুঃশাসনমুক্ত একটি শান্তিময় দেশ।

বাংলা ব্লগদুনিয়ায় যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে সব চেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হল দেশের সুপরিচালনা ও নির্বাচনী ইস্তাহারের ৫.১ পয়েন্ট যাতে লেখা আছে “Terrorism and religious extremism will be controlled with iron hand. Trial of war criminals will be arranged.” (“উগ্রপন্থা ও ধর্মান্ধতা কঠোর হাতে দমন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে”)

১৯৭১এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। দিনে দিনে এই দাবী আরো জোরালো হয়ে উঠছে। সাদিক লিখেছেন:

নতুন সরকারের কাছে প্রথম দাবী হোক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। সবাই সমর্থন জানান এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্র এবং পরিবার পরিজন নিয়েই সোচ্চার হোন “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই”। প্রতিটি মানুষ যদি সমস্বরে দাবী জানাই “যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই” নতুন সরকার সেই দাবী মেনে নিতে বাধ্য।

সাদিকের মতে সায় দিয়েছেন অন্যান্য বাংলা ব্লগাররাও। এদের মাঝে কিছু ব্লগার এই ইস্যুতে জনমত জোরালো করার কাজে নেমে পড়েছেন। নতুন করে মানুষের সই সংগ্রহ করার কাজ চালু করা হয়েছে, আগের অনলাইন পিটিশন এর দাবী আরো জোরালো করতে।

শোহেইল মোতাহির চৌধুরী মনে করেন যে  শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তিই শুধু নয় বরং সময় এসেছে এমন কিছু পদক্ষেপ নেবার যাতে পুরানো ঘায়ে প্রলেপ লাগান যায়। তার মতানুযায়ী:

স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক সরকার বিভিন্ন সময় দেশদ্রোহী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদেরকে যেসব রাষ্ট্রীয় সম্মান বা পদক দিয়েছে – সেগুলো বাতিল করা হোক।

অবশেষে হাসান মোর্শেদ লিখছেন যে নব্য নির্মীত সরকারের কাজ শুধুমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আনাতেই শেষ নয়। তার মতে :

আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার করাই শেষ কথা নয়, বন্ধ করতে হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি…যে রাজনীতি রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধীতা করেছিলো,সেই রাজনীতি রাষ্ট্রের কল্যান কামনা করবে- এমন ইউটোপিয়া থেকে বের হয়ে আসা খুব জরুরী ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .