চীন: মুক্ত আর ভয়হীন হওয়ার জন্যে চার্টার ০৮

ডিসেম্বর ১০ তারিখে মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণার ষাটতম বার্ষিকীর লগ্নে চীনের ৩০৩ জন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি আর মানবাধিকার কর্মী, একত্রে চীনে আরো বেশী রাজনৈতিক সংস্কার দাবী করে ‘চার্টার ০৮’ উন্মুক্ত করেছেন। তবে চীন সরকার মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণা দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেন এই শান্তিপূর্ণ আর যুক্তিযুক্ত আইনকে ভৎসর্না করে দমননীতি প্রয়োগ করে। বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবি, কয়েকজন মানবাধিকার কর্মী আর উকিলকে তদন্তের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন লিউ জিয়াওবো দিন শেষেও পুলিশের হেফাজতে ছিল।

একটা বিশ্বাসঘাতক ঘোষণা?

চীন সরকারের এই চার্টারকে দমন করার পিছনের কারন কি? অবশ্যই কোন অফিসিয়াল ব্যাখ্যা নেই এটা ছাড়া যে লিউ জিয়াওবো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। আমরা হয়তো সরকার পক্ষীয় অনলাইনে মতামত পড়ে এর পিছনের যুক্তি বোঝার চেষ্টা করতে পারি। সিমা নান এই চার্টারকে চৈনিক রঙের বিপ্লবের ঘোষণা বলেছেন:

“中国颜色革命宣言”后签名的人,不少都是一侧颈椎增生扭脸右转死猪不怕开水烫的老面孔。那位林培瑞先生,大家也并很不陌生。早在1989年,他机智地一手策划了方某人的外逃;长期以来,他慷慨地出钱豢养着一批所谓的“民运”人士。当然,出钱的领钱的心里都明镜一般,无论策划逃人,还是出钱养人,均非林老一己之力所能为之,其后悉有庞大的后援支撑,无非年度计划必须完成,无非请人形象代言。

যারা ‘চৈনিক রঙের বিপ্লবের ঘোষণা’ স্বাক্ষর করেছেন তারা একদল কট্টর শূকর। জনাব পেরী লিন আপনাদের অনেকের কাছে আগন্তুক না। ১৯৮৯ সালে তিনি নির্দিষ্ট একজনের পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। অনেক দিন ধরে তিনি একদল লোককে আর্থিক সৌজন্য দেখাচ্ছেন যারা তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রবক্তা। তারা সবাই জানেন যে এই বিপুল অর্থ লিনের কাছ থেকে আসে না। খুব শক্তিশালী একটা সমর্থন আছে, তাদের শুধু দরকার অর্থ সামলানোর জন্য সামনের একটি মুখোশ।

উ ইউ চার্টার ০৮ কে বিশ্বাসঘাতক চার্টার বলেছেন:

昨天在司马南先生的文章里看到了《零八宪章》的中文全文和英文译文,这个以美国普世价值观做意识形态凝聚力的《零八宪章》就是一个卖国汉奸思想导向。因为意识形态和民族文化是最强大的国家凝聚力,这个《零八宪章》宣扬的是美国的意识形态,就是为了建立美国的国家凝聚力,所以《零八宪章》就是卖国的汉奸宪章。

গতকাল সিমা নান এর কাছ থেকে চার্টারের চীনা আর ইংরেজী সংস্করণ আমি পড়েছি। পুরো অধ্যায় আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করা বিশ্ব মুল্যবোধকে তুলে ধরেছে, এটা একটা বিশ্বাসঘাতক চার্টার। একটা জাতির জন্য ভাবাদর্শ আর সংস্কৃতি সব থেকে মজবুত উপাদান যা সবাইকে একত্রে রাখে। যেহেতু এই চার্টার ০৮ আমেরিকার ভাবাদর্শকে প্রচার করে, এটা আমেরিকার একত্র থাকার শক্তিকে তুলে ধরে, তাই এটা একটা বিশ্বাসঘাতক চার্টার।

যদিও চীন সরকার ভিন্নমতের আওয়াজকে দাবিয়ে রাখে, চীনের অনেক ব্লগার ঝুঁকি নিচ্ছে এই চার্টার সই করতে আর একে প্রচার করতে।

ভয়কে জয় করেন

উদারপন্থী কয়েক দিন চেষ্টা করেছে আর শেষে চার্টার নিজ নামে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে:

今天终于签了名,签的真名、真职业,对签名活动来说可能有些晚,但对我来说意义重大。以前顾虑在于,我的职业虽然算自由职业,但时刻处在种种矛盾、旋涡之中,属于每年政府都要注册、年检的那种敏感行业,一个省也不过几千人,当局调查、和谐起来十分方便。

就这样折磨了自己几日,发现自己根本就是庸人自扰。既然内心对一件事深深认同,做与不做又都有可以理解的理由,剩下的就是选择的问题了。“为了正义,哪怕它天崩地裂”是一种选择,不争不鸣、独善其身也是一种选择,两种选择没有高下之分、只有利害之别。说到底,每个人仅对内心负责则矣。而我的权衡结果是:如果不做这件事,将来内心一定会不安。

আজকে, অবশেষে আমি সই করেছি, আমার আসল নাম আর পদবীসহ। হয়তো দেরি হয়ে গেল, কিন্তু আমার কাছে এর মূল্য অনেক। আগে আমার মধ্যে দ্বিধা ছিল, যদিও আমি স্বাধীনভাবে কাজ করি। কিন্তু আমার নিজের সমস্যা ছিল যেহেতু আমার কাজের জন্য প্রতি বছর সরকারের কাছে আমাকে নিবন্ধণ করতে হয়। তারা যদি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাকে মেলানো তাদের জন্য খুবই সহজ।

আমি এটা নিয়ে চিন্তা করে বেশ কিছু দিন নিজের উপর অত্যাচার করেছি। আমি যদি এই ব্যাপারে আসলেই একমত হই আমি করি কিনা, কারন সবই ঠিক থাকে। এটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার। “ন্যায়ের সাথে পরিণাম না দেখে” একটা পছন্দের ব্যাপার, নিজেকে বিপদ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া আর একটা পছন্দ, এর থেকে ভালো আর কোন পছন্দ নেই। আলাদা শুধুমাত্র ঝুঁকির ব্যাপারটা। প্রত্যেককে নিজের মনের ব্যাপারে দায়ী থাকতে হবে। আর আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো: আমি যদি এইবার এটা না করি, আমি ভবিষ্যৎে আফসোস করবো।

৩০৩ জন বুদ্ধিজীবি যারা চার্টার সই করেছেন তাদের একজন বিখ্যাত ব্লগার রান ইউয়ুনফি ভয়ের রাজনীতিকে প্রতিরোধ করার কথা বলেছেন একনায়কতন্ত্রের এই দেশে:

有人说,你就不恐惧吗?我恐惧,和大家一样。但我认为面对恐惧的方式可能有所不同,有人说,你的电话肯定被监听,我说他爱听不听(这不表明我赞赏他来听,我反对他来听,这只是我反对无效时的被动考量,但对他们这种窃听,我一直反对),事涉公众利益,我私下说与公开说的完全一样;有人说,你出来可能有人跟踪,我说我到不了那个级别,即令是有,我也欢迎他一起聊天喝茶,但茶钱你得自己给。官方最高兴的是,你完全按照他威胁性的旨意来生活,生活在恐惧不安中,活得越来越憔悴,生活越来越无趣,它最高兴。它会暗中说,…毋如完全尊重自己的规律与轨迹,这是对制造恐惧者的最大打击。

কেউ কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আমি ভয় পাই কিনা? অন্য সবার মতো আমিও পাই। কিন্তু ভয়কে আমি অন্যদের থেকে আলাদাভাবে জয় করি। কেউ কেউ বলেন আমার ফোন ট্যাপ করা থাকতে পারে। আমি বলি, হতে দাও (তার মানে এই না যে আমি ট্যাপিং এর প্রশংসা করছি, আমি এর বিরোধী, কিন্তু আমার বিরোধীতায় কোন পরিবর্তন হবে না)। যখন এই ব্যাপার জনগনের স্বার্থকে ছুঁয়ে যায়, আমি যা ঘরে বলছি তা বাইরে পাল্টাবে না। কেউ কেউ বলে আমাকে লোকে পিছু নিচ্ছে। আমি বলি ওই পর্যায়ে আমি এখনো পৌঁছাইনি, আর যদি তা হয়েও থাকে তার সাথে চা খেতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু তার অংশের দাম তাকে দিতে হবে। তারা যে ভয় দেখায় সেই ভাবে থাকলে, আপনি দেশের চক্রকে সন্তুষ্ট করবেন। তারা সব থেকে বেশী খুশি হয় আপনাকে ভয়ের মধ্যে থাকতে দেখলে, মজা না করে চিন্তার মধ্যে থাকতে দেখলে…আপনার মূল্যবোধকে আর পছন্দকে সম্মান করেন, এটা ভীতি তৈরিকারকদের জন্য সব থেকে বড় আঘাত।

৭৬ বছর বয়সী লেখক তি লিউ জানিয়েছেন কেন তিনি এই চার্টার সই করেছেন:

我是个七十有六岁的老人,不顾疲劳戴着老花镜把”零8宪章”反反复复地看了三遍,最后毅然签上了自已的名字,位列57 位。”08宪章”写道:…制造了反右、大跃进、文革、六四、打压民间宗教活动与维权运动等一系列人权灾难,致使数千万人失去生命,国民和国家都付出了极为惨重的代价。”难道这不是事实吗?我是历史老人,各种灾难的见证者。

আমি একজন ৭৬ বছর বয়সী লোক, চশমা পরি। আমি চার্টার ০৮ তিনবার পড়েছি, তারপর সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি তালিকায় ৫৭ নম্বর। চার্টারে বলা হয়েছেঃ ”… দক্ষিণপন্থী বিরোধী আন্দোলন (১৯৫৭), গ্রেট লিপ ফরোয়ার্ড (১৯৫৮-১৯৬০), সাংস্কৃতিক আন্দোলন (১৯৬৬-১৯৬৯), চতুর্থ জুন (তিয়েনানমেন স্কোয়ার), ম্যাসাকার (১৯৮৯) আর সাম্প্রতিক সকল অস্বীকৃত ধর্মের উপর নির্যাতন আর ওয়াইকুয়ান অধিকার আন্দোলনকে দমন করা। এই সব কিছুর সময়ে চীনের জনগণ বিশাল মূল্য দিয়েছে। কোটি কোটি লোক জীবন হারিয়েছে, আর বেশ কয়েক প্রজন্ম তাদের স্বাধীনতা, আনন্দ আর মানবিক সম্মানকে পদদলিত হতে দেখেছে”। এই সবই ঐতিহাসিক সত্য, আমি ইতিহাসের সাক্ষী, সকল দূর্যোগের সাক্ষী।

হংকং যদিও বাক স্বাধীনতা আর প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা ভোগ করে, বেশীরভাগ মিডিয়া ‘চার্টার ০৮’ কে অবহেলা করেছে। গতকাল লিউ জিয়াওবোর মুক্তির জন্য একটা বিক্ষোভ মিছিলে আমি যোগদান করেছি, কিন্তু স্থানীয় কোন চীনা মিডিয়া সেখানে ছিলনা, একই সাথে অনলাইনে আলোচনাও খুব সীমিত। আমি একটা নাগরিক প্রতিবেদন লিখেছি ইমিডিয়াক.নেট এ বিক্ষোভ আর মিডিয়ার অবস্থা নিয়ে:

大部份網上媒體,都是主流的鏡子或回音室,從《零八憲章》的傳播看,論壇和 Blog 的獨立性都成疑,畢竟個人的意識、喜好都跟著主流來轉…;再且,個人或缺乏組織的聚眾,在缺乏資源與意識下,亦無法發揮抗衡的作用。香港的 Bloggers 相對國內的,因為缺乏自主的組織與意識,與國內和台灣相比,顯得隨波逐流,而沒有成為資訊傳播的行動者。

《零八憲章》在香港的傳播是一個警號,當我們的教育強調國民身份認同,而主流媒體(尤其是電視媒體)只談奧運、神七與中央救市,完全屏閉人民作為主體的社會改革力量;另一方面,網上/社會上獨立多元的聲音無法成為抗衡的力量,我們的下一代,只會變成國家搖藍下的娃娃。

我們需要更強、更有意識、更多元自主的獨立媒體運動。

বেশীরভাগ অনলাইন মিডিয়ার জন্য, তাদের উচিত মূলধারার ইচ্ছাকে তুলে ধরা। ‘চার্টার ০৮’ এর ক্ষেত্রে, ফোরাম আর ব্লগের স্বাধীন ধারার কথা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। কারন ব্যক্তিগত পছন্দ আর ইচ্ছা মূলধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়… তাছাড়া, ব্যক্তি আর ব্যক্তিগত সমষ্টি কোন মূলধন আর সচেতন সংগঠন ছাড়া মুলধারাকে প্রতিরোধ করতে পারেনা। মুলভূমির সাথে তুলনা করলে, হংকং এর ব্লগারদের স্বাধীন নেটওয়ার্ক বা সচেতনতা নেই, তারা মনে হয় মুলধারার জোয়ারকেই অনুসরণ করে আর তথ্য প্রকাশের কর্মী হতে ভুলে যায়।

‘চার্টার ০৮’ এর প্রচার হংকং এর জন্য একটা সতর্কবাণী। সরকার দেশপ্রেমী শিক্ষার প্রচার করছে আর আমাদের মুলধারার মিডিয়া, বিশেষ করে টেলিভিশন মিডিয়া শুধু কথা বলছে অলিম্পিক, মহাশূন্য ভ্রমণ আর কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় হস্তক্ষেপ নিয়ে কথা বলছে আর মানুষের সামাজিক পরিবর্তনের জন্য চেষ্টাকে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অনলাইন স্বাধীন মিডিয়া শক্তিশালী হিসাবে গড়ে ওঠেনি আর প্রোপাগাণ্ডার বিরুদ্ধ শক্তি হিসাবে দাড়াতে পারেনি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেশের দোলনায় শিশুতে পরিণত হবে।

আমাদের এখানে আরো শক্তিশালী, ব্যাপৃত আর স্বাধীন মিডিয়া আন্দোলন দরকার।

এখন পর্যন্ত হাজার হাজার চীনা এই চার্টারে সই করেছেন আর অনেক অনলাইন প্লাটফর্ম আছে সই সংগ্রহ করার জন্য, যার মধ্যে আছে: জোলার গুগুল নোল আর ইনমিডিয়াএইচকে.নেট বা আপনি ইমেইল পাঠাতে পারেন: 2008xianzhang@gmail.com বা poonkarwai@gmail.com এই দুটি ঠিকানায়।

চার্টারের ইংরেজী সংস্করণ এখানে পাওয়া যাবে, জাপানী সংস্করণ এখানে আর চৈনিক সংস্করণ এখানে

ছবি: হেগেলচোং এর সৌজন্যে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .