লাটভিয়া: রিগার বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান আদালত

একজন মানুষ তার দেশের যুদ্ধাবস্থায় কি করে তা নিয়ে বিচার করার অধিকার কার আছে আর এই ধরনের সিদ্ধান্তের আইনী ভিত্তি কি হওয়া উচিত? এগুলো কয়েকটা মূল বিষয় যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধী সোভিয়েত সেনা ভাসিলি কোনোনভের বিচারের ক্ষেত্রে উঠেছে যা লাটভিয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় ১৯৯৮ থেকে চলছে। কিন্তু এই সপ্তাহের প্রথম দিকে মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপিয়ান আদালত রায় দিয়েছে যে কনোনভকে দোষী সাব্যস্ত করতে যথাযত আইনগত সামর্থ নেই লাটভিয়ার। রায়ের পর, রাশিয়ার ব্লগসমূহ আনন্দ আর স্বস্তির সাথে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, যদিও কিছু প্রতিবাদ শোনা গেছে।

মে ১৯৪৪ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ বছরে কনোনভ রেড পার্টিসানদের একটা দলকে লাটভিয়ার একটা গ্রামে আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই গ্রামের লোকজন এর আগে আর একদল পার্টিসানদের জার্মানদের হাতে তুলে দিয়েছিল। এর জন্যে ঐ গ্রামের অভিযুক্ত নয়জন লাটভিয়ান সহযোগীকে হত্যা করা হয় যাদের মধ্যে ৩জন মহিলা ছিল এবং তাদের মধ্যে একজন গর্ভাবস্থার শেষ অবস্থায় ছিল।

যারা ইউরোপিয়ান আদালতের রায়ের ব্যাপারে ধনাত্মক মতামত দিয়েছে রাশিয়ান ব্লগে তারা সাধারনভাবে লাটভিয়াকে জাতি হিসাবে সমালোচনা করেছে, মামলাটাকে না।

এলজে (লাইভজার্নাল) ব্যবহারকারি গিলেক্স মনে করেন এই রায় একটা নৈতিক বিজয় আর যুক্তি দেখান যে ইউরোপ অনেক দিন পর্যন্ত তাদের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখেছে যখন লাটভিয়া এস এস (জার্মান) সেনাদের রিগার রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা করতে দিয়েছে।

ওলেগ মোতকোভ এই রায়কে লাটভিয়ার জন্য সাবধান বাণী হিসাবে দেখছেন যাতে তারা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি না করে।

ইজ ব্লকনোটা জুরনালিস্টা বিশ্বাস করে যে ইউরোপিয়ান আদালত তাদের রায়ের মাধ্যমে মেনে নিয়েছে যে ১৯৪৪ এ লাটভিয়া সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল আর রেড আর্মি মুক্তিদাতা হিসেবে ছিল, দখলকারি হিসেবে না যেমন লাটভিয়া দাবি করে।

এই ধারনার সাথে সোকোল ইজ নার্নি যোগ দিয়ে মনে করেন যে লাতভিয়াকে এইবার হেট করানো গিয়েছে আর একই ঘটনা এস্তোনিয়ার ক্ষেত্রেও হতে পারে।

কিন্তু বিরোধী কন্ঠও আছে।

এলজে ব্যবহারকারী গিবালদি আহ্বান করেছেন যেন সবাই যেন আগে রায় পড়ে তারপর চিন্তা করে। তার নিজের মতামত হল যে কনোনভ একজন যুদ্ধাপরাধী আর মানসিক বিকারগ্রস্ত খুনী।

পরিচয় বিহীন একটা এলজে মন্তব্য সাথী ব্লগারদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে রাশিয়ার সেনারা লাটভিয়ানদের জড়ো করে সাইবেরিয়াতে পাঠিয়েছে, তাদের পরিবারসহ গ্রেপ্তার আর হত্যা করেছে। তাহলে তাদেরকে (লাটভিয়ানদের) এখন রাশিয়া বিরোধী কেন বলছেন?

পরিশেষে ওল্গাকুচিনার একটা মন্তব্য বিষয়টার নৈতিক দিকটা দেখতে চেয়েছে:

তারা জার্মান ইউনিফর্ম পরে, গ্রামে গিয়ে তা ধ্বংস করেছে, মানুষকে জীবন্ত তাদের বাড়িতে পুড়িয়ে মেরেছে যাদের মধ্যে নয়মাসের গর্ভবতী মহিলা ছিল। আর এই সমস্ত নোংরামি আর ময়লাকে আপনারা ন্যায়ের কাজ বলেন আর নিজেদের মানুষ হিসাবে গর্ব করেন।

তাহলে কারা ঠিক- কনোনভের পক্ষের না বিপক্ষের লোকেরা? আসলে মানবাধিকার বিষয়ক ইউরোপিয়ান আদালত তাদের রায় অন্য জিনিষের উপর ভিত্তি করে দিয়েছে যা ব্লগারদের উদ্ধৃত বিষয়গুলো থেকে আলাদা। আসল বিষয় হলো ১৯৪৪ এর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কনোনভ যুদ্ধাপরাধ করেছে কিনা। কিন্তু লাটভিয়া ব্যর্থ হয়েছে সেই সময়ের আইনের প্রয়োগ দেখাতে আর এই ব্যাপারে প্রমান দেখাতে। বরং ১৯৪৪ এর পর গঠিত আইনে কনোনভের বিচার হচ্ছিল বা অভ্যস্তরীণ আইন দ্বারা যার এই কেসের সাথে কোন সামঞ্জস্য নেই। যার জন্য লাটভিয়ার আইনের ব্যর্থতা আদালত তুলে ধরেছে যা তাদেরকে কখনো সমর্থ করবে না কনোনভকে দোষী বা নির্দোষ প্রমান করতে। লাটভিয়া হেরেছে আর কনোনভ জিতেছে, কিন্তু এই প্রাচীন সোভিয়েত সেনা আসলে নায়ক না গুন্ডা ছিল যুদ্ধের সময় তা হয়ত কখনও সমাধান করা হবেনা।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .