গুয়াতেমালাঃ বিশপ গেরারদি ও তার রিপোর্ট “আর কখনও না”

“সত্যকে জানা বেদনাদায়ক হলেও ইহাই মুক্তির সবোর্চ্চ উপায়”
– ১৯৯৮ সালের ৪ঠা এপ্রিলে বিশপ জুয়ান গেরারদি

দশ বছর আগে, বিশপ জুয়ান গেরারদিগুয়াতেমালা, আর কখনও না!” নামে একটা রিপোর্টে সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে চিরজীবনের জন্য দুর্দশায় পতিত মানুষদের কথা প্রমান্যদলিলের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। রিপোর্টটিতে অপরাধীদের নামধামসহ সুস্পষ্ট বর্ণনা উল্লেখ ছিল যার হিসাবে চুকাতে হয়েছে বিশপ গেরারদিকে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে। রিপোর্টটি প্রকাশের আনুমানিক পঞ্চাশ ঘন্টা পরে তিনি নিহত হয়েছিলেন। এক যুগ পরে, গুয়াতেমালার ব্লগাররা জনসাধারণের সচেতনতার জন্য যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র সামনে তুলে ধরা মহান ব্যক্তিটিকে স্মরণ করেছেন।

হত্যাকান্ডটি ছিল নৃশংস, বাসভবনের সামনে কংক্রিটের স্লাব দিয়ে পিটিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। কিছু অপরাধীচক্রকে বিচারের সম্মুখীন করা গেলেও বিশ্বাস করা হয় বেশীরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। মানুষজন মনে করে ক্যাথলিক চার্চের একটা প্রকল্প রিকভারী অব হিস্টরিকাল মেমরি (রিইএমএইচআই) এই রিপোটর্টির সাথে হত্যাকান্ডটি সম্পর্কযুক্ত।

মি মুনডু [স্প্যানিসে] থেকে জ্যামস রডরিগজ এর অনুমতিসহ ছবিটা ব্যবহৃত

সেরিগুয়া ব্লগ একটা চিঠি প্রকাশ [স্প্যানিসে] করেছে যেখানে সেন্টার ফর জাস্টিস এন্ড ইন্ট্যারন্যাশনাল ল (সিইজেআইএল) বিশপের হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অন্যান্যদের খুঁজে বের করার দাবী জানিয়েছে। অন্যদিকে ডমিনন ব্লগার কিছু স্মরনীয় ঘটনার তথ্য দিয়েছেঃ

গুয়াতামেলার ক্যাথিড্রালে গেরারদির স্মৃতিচারণ করে কার্ডিনাল রোডোলফো কোয়াজাদা টরুনো জোরালো এক ধর্মীয় বক্তৃতা দিয়েছেন । তাকে সমর্থন করে দীর্ঘক্ষন প্রশংসাসূচক ধ্বনি ব্যক্ত হয় যখন তিনি বলেন, যতক্ষণ না আমরা জানতে পারি কে এবং কি কারণে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্যাথলিক চার্চ বিশপ গেরারদির হত্যাকান্ডের বিচার দাবী থেকে সরে আসবে না।

সাবেক সাংবাদিক ও অধ্যাপক এ্যানা মারিয়া রোডাস, লা কলাম ডি আনা [স্প্যানিস] ব্লগে স্মরণ করেছেন রিপোর্টটি প্রকাশের দিনটির কথাঃ

El 24 de abril de 1998 salí de la Iglesia Catedral luego de haber asistido a la ceremonia donde la Oficina de Derechos Humanos del Arzobispado había dado a conocer a grandes rasgos los resultados de sus investigaciones sobre las atrocidades cometidas durante la guerra sucia en Guatemala. A grandes rasgos, digo, porque en un par de horas no se podía conocer todo lo que contienen los cuatro los libros con los hallazgos del Obispo y de sus colaboradores, el REHMI. El aire de la tarde era suave y sentí que por primera vez en muchos años, podía respirar libremente. Desde el atrio vi hacia el parque central….. y lloré en paz. Mis muertos, nuestros muertos, podían comenzar a descansar en paz.

এপ্রিল ২৪, ১৯৯৮। আমি ক্যাথিড্রালে একটা অনুষ্ঠান থেকে ফিরলাম, যেখানে চার্চের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর গুয়াতেমালার ঘৃণ্য যুদ্ধের নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো নিয়ে সংকলিত একটি রিপোর্ট সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেছে। সংক্ষিপ্ত এই জন্য বলছি কারণ মাত্র কয়েক ঘন্টায় একজনের পক্ষে জানা সম্ভব নয় বিশপ ও আরইএমএইচআই (রিপোর্টটি) সহযোগীদের আবিষ্কৃত তথ্যাদি। বিকেলের মৃদুমন্দ বাতাসে দীর্ঘ কয়েকবছরের মধ্যে এই প্রথম মুক্তভাবে নিশ্বাস নিলাম যেন। হি অটরিয়াম থেকে আমি সেন্ট্রাল পার্ক দেখতে পাচ্ছিলাম – শেষে চিৎকার করে উঠলাম। আমার মৃত্যুগুলো, আমাদের মৃত্যুগুলো শেষাবধি শান্তিতে বিশ্রাম নেবে।

হত্যাকান্ডের পরে রিপোর্টের আবিষ্কৃত তথ্যগুলোর দিকে প্রদত্ত মনযোগ এখন সেদিকে নিবন্ধ হয়েছে। জাতীয় গল্পে পরিণত হয়েছে খুনীদের খুঁজে বের করার পদ্ধতি এবং এর বেশীরভাগই বিতর্কিত। সত্যকে ঢেকে ফেলার খেলা নিয়ে অনুসন্ধানকারী একটা বই লিখেছেন ফ্রান্সিকো গোল্ডম্যান “দি আর্ট অব পলিটিক্যাল মার্ডারঃ হু কিলড দ্যা বিশপ?” নামে। গুয়াতেমালার সলিডারিটি নেটওয়ার্ক ব্লগ বইটির একটা রিভিউ প্রকাশ করেছেঃ

গোল্ডম্যানের বইটা ছিল ঝোঁকের বসে কেনা। গার্ডিয়ান ওয়েবসাইটের কোথাও রিভিউটা ছিল, দৃশ্যতঃ এটা এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বই যেটা সালমান রুশদি রেটিং করেছেন। এবং এটা গুয়াতেমালায় করা হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্বের একটা অংশের সাথে আবেগী সাদৃশ্যতা বোধ করতাম। জানতাম গোল্ডম্যান একটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখছেন, এবং জানলাম পরে সেটা এই বিষয় নিয়ে লেখা। শুরু থেকে একদম যবনিকাপাত পর্যন্ত দৃশ্য এবং ঘটনার বিশদ বর্ণনায় আমি নিদৃষ্ট ছিলাম। একটা স্লথগতির হিসাবী গল্প যা গোয়ান্দাদের সিদ্ধান্তে নিখুঁতভাবে নিমগ্ন থেকেছে। গল্পের অগ্রগতিতে আপনি নিগূঢ় অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভাবতে সময় পাবেন, এবং ক্রমশ সেই শক্তিকে উপস্থাপন করবে যা গুয়াতেমালার ইতিহাস গঠনে ভূমিকা রেখেছে এবং আমেরিকাসের ইতিহাসেরও অনেকটা, প্রথমে প্রায় গতানুগতিক নিষ্ঠুরতার স্বতন্ত্র ঘটনা থেকে একদম পরিকল্পিত আয়োজনের নির্যাতনের কাহিনী।

গুয়াতেমালার ব্লগাররা এমন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের মহিমা স্মরণ করেছেন। যাদের প্রতিবাদের ভাষা ছিল না তিনি তাদের জন্য বলেছেন, ভয়াল সশস্ত্র সংঘর্ষে সরাসরি আক্রান্তদের কথা বলেছেন। যে যুদ্ধে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে বা জোর করে শিশুযোদ্ধা বানানো হয়েছে। এর স্মৃতি বেশীরভাগই সমাজ থেকে মুছে গেছে, এবং ব্লগার হুনাপু ইক্সবালনকু [স্প্যানিসে] এই বিষ্ময়কর স্মৃতিলোপাটের ঘটনা নিয়ে লিখেছেন গেরারদি এগেইন্সট আমনেসিয়ায়

Monseñor Gerardi dió su vida por que se conociera la historia que hasta hoy en día aún es desconocida por la mayoría de guatemaltecos. Su enemigo mayor fué la amnesia colectiva, una de las peores formas de injusticia. De ahí que para honrar la memoria de Monseñor Gerardi lo menos que podemos hacer los guatemaltecos es leer el Informe REHMI.

মনসেনর গেরারদি তার জীবন উৎসর্গ করেছেন ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে যা আজকের বেশীরভাগ গুয়াতেমালানদের অজ্ঞাত। গেরারদির প্রধান শত্রু হচ্ছে স্মৃতিবিলোপ – অসততার সবচেয়ে জঘন্যতম বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং মনেসনর গেরারদির স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে আমাদের গুয়েতামালানদের অবশ্যই আরইএইচএমই রিপোর্টটি [স্প্যানিস] পড়তে হবে।

ব্লগার বিবলিওটেকা ডেল গ্রিলোর [স্প্যানিসে] একটা কবিতার নির্যাস তুলে ধরা হয়েছেঃ

Querías “construir un país otro”/ soñabas una nueva Verapaz. “La construcción del Reino tiene riesgos”, lo sabías muy bien, pero vivías los derechos humanos como sueños divinos; con tu sed de justicia verdadera; en tu opción por las víctimas, que son también los pobres

নতুন একটা দেশ গড়তে চেয়েছিলে, নতুন ভেরাপাজের স্বপ্ন দেখেছিলে। নতুন রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অনেক ঝুঁকি, এটা ভাল করেই জানতে। কিন্তু মানবাধিকারকে সজীব করেছো স্বর্গীয় স্বপ্নরূপে, সঠিক বিচারের জন্য ব্যাকুল ছিলে তাই দরিদ্র অসহায়দের জন্য সংগ্রামই বেছে নিলে।

এমন অসংখ্য উৎস আছে যেখানে আপনি বেঁচে যাওয়াদের সাক্ষ্যপ্রমানের কথা শুনবেন। এরকম একটা সূত্র হচ্ছে পারা নানকা অলভিদার (কখনও ভুলতে নেই) যেখান থেকে শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করার জন্য অন্যান্য দেশের শিক্ষকরা এইসব প্রমান্যচিত্র ডাউনলোড করতে পারে।

মি মুনডু [স্প্যানিসে] থেকে জ্যামস রডরিগজ এর অনুমতিসহ ছবিটা ব্যবহৃত

ব্লগার দিয়ারিও প্যারানয়কো দ্যা মেসেস অব দ্যা বিশপের একটা পয়েন্ট তুলে ধরেছেনঃ

Es sorprendente el alcance que ha tenido la guerra, incluso en nuestros días. En nuestro ADN, se ha inyectado el cromosoma del miedo y del silencio. Nadie está interesado en conocer su historia; miles de jóvenes y adultos se preguntan ahora quién fue ese tío desaparecido al que no conocieron y sus padres no se han atrevido a contar su historia. Huérfanos que no saben dónde está su familia…

যুদ্ধ যে কি প্রচন্ড ক্ষতি করেছে আমাদের তা শুনলে এখনও বিষ্মিত হতে হয়। আমাদের ডিএনএর ভেতরে ভীতি ও নীরবতার ক্রমোজম এটা। কেউ খেয়াল করছে না, কেউ জানতে চায়না ইতিহাস সম্পর্কে, হাজারো হাজারো তরুনরা তাদের হারিয়ে যাওয়া চাচা-মামা বা আত্মীয়দের খুঁজে বেরায় অথচ তাদের পিতামাতারা এ সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকে। যুদ্ধে পিতামাতা হারানো অনেক সন্তানই জানে না কোথায় তাদের সমাধিস্থ করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .