এইডস – আরব বিশ্বের ট্যাবু

এইডস রোগ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অর্জিত ঘাটতির মরণঘাতী লক্ষণ অথচ এটি আরব বিশ্বে নিষিদ্ধ একটি শব্দ। কিন্তু এ সপ্তাহে জর্দান, ইরাক, প্যালেস্টাইন, বাহরাইন ও ইয়েমেনের অসংখ্য ব্লগে এই ভীতিকর শব্দটি জায়গা করে নিয়েছে।

পেশায় চিকিৎসক জর্দানিয়ান ব্লগার হারিগা এইচআইভি সহায়তা প্রদানকারী ক্লিনিকে তার কার্যক্রম বিষয়ে একজন পরিচিতের সাথে সংঘটিত এক “অস্বস্তিকর কথোপকথন” তুলে ধরেন:

একজন বন্ধু প্রশ্ন করল, “তোমার কাজ কেমন চলছে এ মাসে?”
“ভাল, সপ্তাহে তিনদিন এইচআইভি ক্লিনিকে যাচ্ছি”
“এইচআইভি? মানে এইডস?”
“হ্যা”
“সাবধানে থাকবে!”
“কি থেকে সাবধানে থাকবো?”
সে এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমি একটা গর্দভ, “এইডস থেকে সাবধানে থাকবে!”
“কেন আমি সাবধানে থাকবো?”
“দেখো এইচআইভি – এইডসের জন্যই সাবধানে থাকবে!”
“কিন্তু কেন আমি সাবধানে থাকবো? আমি আমার রুগীদের সাথে ক্লিনিকে শুই না”
“আরে গর্দভ! আমি জানি, কিন্তু তারপরেও এইডস থেকে সাবধানে থাকবে”
“রোগীদের কোন ওষুধ আমার শরীরে প্রবেশ করে না”
“জানি, জানি আমি! কিন্তু তারপরেও সাবধানে থাকবে!”
“কিসের থেকে?”
“শোন, আমি কোন বিজ্ঞানী নই (অবশ্যই), তারপরেও বলি, তোমাকে সাবধানে থাকতে হবে, অথবা আমাকে তোমার থেকেই সাবধান হতে হবে!”

হারিগা বলে চলেন:

২০০৮ এর পহেলা জানুয়ারী থেকে জর্দানে বাইশটির মত নতুন এইচআইভি কেস শনাক্ত করা গেছে। জর্দানীদের মধ্যে, বিশেষত: সুশিক্ষিতদের মধ্যে এইডস বিষয়ক জন সচেতনতা শূন্যের কোঠায় এবং ক্রমশ আরো হ্রাস পাচ্ছে।

ইরাকী লায়লা আনোয়ার  আরব বিশ্বে এ রোগের সম্প্রসারণ ঘটতে থাকলেও অনুল্লেখ্য আলোচনার জন্য ক্ষুব্ধ মতামত প্রকাশ করেছেন। এইডসের উপরে প্রচারিত একটা টেলিভিশন অনুষ্ঠান দেখে এই ব্লগার লিখেছেন:

কয়েক মাস পূর্বে আরবী ভাষার আল জাজিরা চ্যানেলে আরব বিশ্বের এইচআইভি ও অন্যান্য যৌন সংক্রমিত রোগ নিয়ে প্রচারিত একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম।

প্রযোজক চাতুর্যতার সাথে একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আদলে এই স্পর্শকাতর এবং অনুচ্চারিত বিষয় উল্লেখ করার প্রয়াস নেন এবং একাধারে চিকিৎসাশাস্ত্র ও ধর্মবিজ্ঞান মানে ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে বিশেষজ্ঞ একজন বক্তাকে অতিথি হিসাবে আহবান করেন।

লায়লা ব্যাখ্যা করেন:

আরব বিশ্বে এইচআইভি বহনকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কেউ এটা স্বীকার করতে না চাইলেও এটি সত্য। আমরা সবাই জানি কিভাবে এইচআইভি সংক্রমিত হয় এবং আমরা আরো জানি নিরাপদ যৌন সম্পর্কের চর্চা এবং ব্লাড ব্যাংকের রক্ত পরীক্ষা করা কত আব্শ্যকীয় হয়ে পড়েছে। কিন্তু অনুষ্ঠানে যা আমার মনোযোগ কেড়েছে তা ভিন্ন। মনোযোগ আকর্ষণের বিষয় হচ্ছে যে আরব বিশ্বের সমকামীদের মধ্যেই কেবল নয়, অসমলৈঙ্গিক বিবাহিত যুগলদের মধ্যেও এইচআইভি ও যৌন সংক্রমিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমন্ত্রিত অতিথি হলেন এপিডেমিওলজি ও সংক্রমিত রোগের বিশেষজ্ঞ। এবং তার কর্মক্ষেত্রে বেশ কিছু (আক্রান্তদের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে নাই) এমন যুগলদের দেখেছেন যাদের বেশীর ভাগই বিবাহিত এবং এসটিডি বিশেষত: এইচআইভিতে আক্রান্ত।
শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে মহিলাটি তার স্বামী কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। যে স্বামী অন্য কোন নারীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত অনিরাপদ যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং কখনও কখনও এ সম্পর্ক কোন পুরুষ সঙ্গীর সাথেও ঘটিয়েছে । শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষ নিজেকে অপ্রতিরোধ্য মনে করে এবং কোনরূপ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিশেষত কনডমের ব্যবহারকে প্রত্যাখ্যান করে।

সুতরাং স্বামীরা তাদের ব্যবসায়িক সফর অথবা বাইরে নিশিযাপন শেষে বাড়ী ফিরে নিজেদের স্ত্রী/সঙ্গীকে মৃত্যুচুম্বন উপহার দিয়ে থাকে।

ট্যাবু বিষয়ে লায়লা বলেনঃ

আপনি অবশ্যই বুঝতে সক্ষম যে এ বিষয়ে কথা বলাকে আরব বিশ্বে নিশিদ্ধ বিষয় ভাবা হয়। এইডসের প্রকোপকে উড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা সর্বত্র এবং প্রতিক্রিয়ামূলক হাজারো ব্যাখ্যা রয়েছে, যেমন “আমাদের মুসলিম সমাজে এমন কিছু নেই”, “কার্পেটের নীচে লুকিয়ে ফেলো এবং প্রতিবেশীকে জানতে দিও না – মানুষজন কি ভাববে”.. ইত্যাদি।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দেয়াল এত মজবুত যে নষ্ট, অসভ্য এবং অনৈতিক বলে অভিযুক্ত হওয়া ছাড়া জনসম্মুখে এ বিষয়ে কথা বলা অসম্ভব। ইতোমধ্যে লজ্জা ও অপরাধের গ্লানি মাথায় নিয়ে এইডস আক্রান্ত নীরবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

মিশরের একটা আদালতে সমকামীতায় অভিযুক্ত একটা মামলা যেভাবে পরিচালনা করা হয়েছে তার প্রতি প্যালেস্টাইন থেকে অমল এ ঘৃনা প্রকাশ করেছেন এবং এইডস নিয়ে লিখেছেন। উক্ত আদালতে সরকারী পক্ষের আইনজীবি একজন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তার এইচআইভি পজেটিভ আছে জানার পরে বলেছেন, “তোমার মত মানুষকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা উচিত। তোমার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।” তিনি বলেন:

যদি মিশর এই বিধান চালু করে যে পুরুষদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষদের জেলে প্রেরণ করা হবে তবে মিশরের আরো জেলাখানা তৈরী করতে হবে। (….)

এইডসকে শাস্তিসরূপ দেখা ধ্বংষাত্মক!!! এইচআইভি পজেটিভ/এইডস রোগীদের অবহেলা ও শয়তান রূপে চিন্থিত করে মিশরীয়দের রক্ষা করা যাবে না। আসলে এটা মিশরীয়দের রক্ষা করার বিষয়ও নয়। এ হচ্ছে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানো যা দূর্বলদের শক্তিকে আরো ক্ষয় করে ফেলছে।

অবশ্য ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে এবং একটা রূপালী রেখাও প্রতিভাত হচ্ছে। বাহরাইনী বাটারফ্লাই “আরব বিশ্বের এইডস বিষয়ে সাড়া প্রদানকারী মুক্ত শিল্পী/ব্লগার” শীর্ষক অনুষ্ঠিতব্য একটা ওয়ার্কশপে যোগ দিতে কায়রো যাচ্ছেন। তিনি জানাচ্ছেন:

وستضم الورشة مجموعة من المدونين والمبدعين العرب في مجال التصوير وصناعة الافلام السينمائية وغيرها من الفنون الإعلامية.
هذه هي المرة الأولى التي سيتسنى لي فيها حضور فعالية تخص برنامج الامم المتحدة الانمائي في البحرين، كما ستكون المرة الأولى ايضا التي ستتاح لي فيها فرصة اللقاء بالمدونين والمبدعين العرب من مختلف الاقطار العربية. وسأشارككم بالطبع بما سأكتشفه من اسرار ودهاليز تتعلق بهذا المرض المخيف الذي لايزال الحديث عنه محظورا في معظم دولنا العربية.

ওয়ার্কশপে ফটোগ্রাফী, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্লগার এবং সৃজনশীল আরবরা উপস্থিত থাকবেন।

বাহরাইনের ইউএনডিপি আয়োজিত এমন অনুষ্ঠানে এই প্রথমবারের মত আমি অংশ নিতে যাচ্ছি যেখানে আরব বিশ্বের ব্লগার ও শিল্পীদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হবে। এই ভীতিজনক রোগটি সন্বন্ধে যে গোপনীয় তথ্য অবগত হবো সেগুলো আমি অবশ্যই আপনাদের সাথে বিনিময় করবো; যেখানে এইডস নিয়ে কথা বলাও বেশীরভাগ আরব রাষ্ট্রে একপ্রকার নিষিদ্ধ হয়ে আছে।

সর্বোপরি, আর্মিস অব লিবারেশন এইডসের এক অলৌকিক হারবাল প্রতিষেধক আবিস্কারের খবর দিয়েছে। ইয়েমেনে বানানো প্রতিষেধকটি সন্বন্ধে দাবী করা হচ্ছে এটা নাকি মৃত্যুরূপী এইডসের ভাইরাসকে হত্যা করতে পারে!

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .