ক্যামেরুনঃ ছড়িয়ে পড়া অসন্তোষে কি রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে?

এই সপ্তাহে সংঘটিত সহিংসতা গত ১৫ বছরের মধ্যে ক্যামেরুনে সব থেকে খারাপ বলা যায়। এটি শুরু হয় একটি যানবাহনের ধর্মঘট দিয়ে, যা ইউনিয়নরা গত বুধবারে আনুষ্ঠানিক ভাবে শেষ করেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এটি রূপ নিল খাদ্য আর জালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ প্রতিবাদে। তার মধ্যে ইন্ধন যুগিয়েছে প্রেসিডেন্ট বিয়ার সংবিধান পাল্টানোর চেষ্টা যা তার ২৫ বছরের শাসন আরও প্রলম্বিত করবে।

এ পর্যন্ত প্রায় ২৪ জন মারা গিয়েছে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে মারছে, মাঝে মাঝে হেলিকপ্টার থেকে গ্যাস এর ক্যানিস্টার ফেলে দিচ্ছে

উত্তরপশ্চিম ক্যামেরুনের শহর বামেন্দাতে যখন প্যারামিলিটারি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের তাড়া করছিল তখন তারা নাকি স্কুলের বাচ্চাদের মানব বর্ম হিসেবে সামনে রেখেছে।

সংকট যত বাড়ছে ক্যামেরুনের ব্লগার আর পাঠক, যাদের মধ্যে অনেকে বাইরে থেকে লেখে, তারা তাদের নিকটজনদের জন্য চিন্তিত হচ্ছে আর দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক করছে।

ফ্রান্সে থাকা একজন ক্যামেরুনের অধিবাসী তার লা ব্লগ দু প্রেসেতেদ্যা আওয়ার ইজ গ্রেভ” নামক একটি লেখা লিখেছেন:

সোমবারে আমার এক বন্ধুর লেখা ইমেইলের শিরোনাম এইটা। আর এর কারন আছে। ক্যামেরুনের প্রধান শহর বিশেষ করে দোউয়ালা স্থবির হয়ে পড়েছে অজস্র সংঘর্ষ আর রাস্তা বন্ধ দেয়ার কারনে। এসবের কারন হল রাজপুত্র সংবিধান সংশোধন করে নিজে আরো কয়েক বছর শাসন করতে চায় আর একই সাথে সে জনগণ কে বিপদের মধ্যে ফেলেছে যোগাযোগ শ্রমিকদের ধর্মঘটে যেতে বাধ্য করে। এই সব কিছু মিলিয়ে একটা বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি করছে যার ফলাফল বুমেরাং এর মতো হচ্ছে, আর এর ফলে যে সব লোক বিপদে ছিল তাদের আরো সমস্যা হচ্ছে।

বর্তমানে ক্যামেরুনে থাকা এডুয়ার্ড নামক পাঠক বলেছেন যে এই সমস্যা আরো বেশী বিস্তৃত আর গুরুতর:

এ গভীর সংকটের সময়। ভাইয়েরা, ক্যামেরুন থেকে দেখলে এই কথাও শুধু যথেষ্ট না। শুধুমাত্র দুয়ালাতে আগুন জ্বলছে না। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম আর ইয়ায়ুন্দে সব জায়গায় সমস্যা হচ্ছে।

আজ রাজধানীতে সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে। এবং বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না এখন সেনাবাহিনী আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেমেছে। আগুন জ্বলছে সর্বত্র, বিশেষ করে মোকোলো আর শিংগাতে। মূল ডাকঘরও বন্ধ।

শুধু যোগাযোগ শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপারটা এখন আবদ্ধ নেই, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অফিসে যেতে আমাকে ৩০ কিমি ঘুরে যেতে হয়।কিন্তু গতকাল আমাদের সংবাদপত্র ছাপার জন্যে তৈরিও ছিল না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে খবর দিচ্ছি। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

আর একজন পাঠক, প্রিন্সেসডি, লিখেছেন যে ক্যামেরুনের মানুষ যথেষ্ট দেখেছে, আর তাদের পরিবার আর বন্ধুদের জন্য চিন্তিত হয়েছেন:

আমি আর ঘুমাতে পারিনা। আমি আমার পরিবার, বন্ধু আর প্রিয়জনদের কথা ভাবি যারা দেশে আছে। তাদের কি হবে? আমরা কি গনহত্যার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? আমি ক্যামেরুন নিয়ে ভয়ে আছি… মানুষ বিরক্ত! এক সিলিন্ডার জ্বালানী গ্যাস ৬০০০ ফ্রা, এক লিটার পাম তেল ১০০ ফ্রা, একটি সাবান ৩৫০ ফ্রা, এক বস্তা সার ২০,০০০ ফ্রা, এক লিটার জ্বালানী তেল ৬০০ ফ্রা এর বেশি…এগুলো কোন বেতনে কেনা যাবে? আর মহামান্য বলেন ”যে কোন মূল্যে শৃঙ্খলা রাখা হবে।

আমরা কোথায় যাচ্ছি?

রু ৮৯ নান্মী প্যারিসের স্বাধীন আর অংশগ্রহণ মূলক খবরের ওয়েবসাইটে আজ্জা নামক একজন পাঠক লিখেছেন যে বিয়া'র প্রতি ফ্রান্সের সমর্থনও তাকে আর বাঁচাতে পারবে না:

ফ্রাঙ্ক আফ্রিকার আর একজন ডাইনোসর তার শাসন চালাতে চাচ্ছে এমন জনগণের উপর যারা যথেষ্ট পরিমাণ পক্ষপাত-দুষ্টতা আর খারাপ নির্বাচন দেখেছে।

এর আগ পর্যন্ত সে প্যারিসের সমর্থনের উপর নির্ভর করতে পারত তার লোকের প্রতি ঔদাসিন্য দেখাবার জন্য যারা এত দিন সাহস করে নি তাদের নিজেদের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করার।

ডিবুশি তান্দের ব্লগ স্ক্রিবলস ফ্রম দ্যা ডেন এ ইংরেজী ভাষী পাঠকরা আশা প্রকাশ করেছেন যে এই অশান্ত পরিবেশ অনেক দিন থেকে অপেক্ষমাণ রাজনৈতিক পরিবর্তন আনবে।

দ্যা সাউথওয়েস্টার্নার:

অবশেষে এই আকাঙ্খিত জাগরণ ঘটছে আর গতকাল সকাল আর বিকালের ফোনের আলাপ থেকে আমি জানতে পেরেছি যে এটা ক্যামেরুনের চার কোনায় ঘটেছে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব আর পশ্চিমে কি হবে তা এখনো তৈরি হচ্ছে। ক্যামেরুনের সব সন্তান জিতবে।

ইনোসেন্ট দিফোর মাঞ্চো:

আজকে ক্যামেরুনের ছেলেরা বুঝেছে যে তাদের ভবিষ্যৎ তাদের হাতে তুলে নিতে হবে। বিয়ার আর তাদের রাজনৈতিক গুন্ডাদের সাহায্যে শত শত বছর ধরে নির্বাচন কারচুপি করে, সংবিধান, মানবাধিকার, বিচার, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ছাত্র, শিক্ষক, জোয়ান , বৃদ্ধ সব কিছু তারা বশে এনেছে। বশ্য তারা ভুলে গেছে পুরানো কথনের কথা যে সমস্ত মানুষ কে শুধু কিছুদিন মাত্র বোকা বানানো যায়।

এনগা আডল্প:

এখন সময় ক্যামেরুনের বিরোধী দলের এই পরিস্থিতি থেকে সব চেয়ে ফায়দা লোটা, কারন এবার সুযোগ হারালে অনেক দিনের জন্য এত দরকারী সংস্কার আর করা যাবে না। কোন ভুল করনা, বেগ বৃদ্ধি করতে হবে, আর পুরো জাতিকে গ্রাস করে নিতে হবে যেভাবে ঢেউ তীরের সব আনাচে কানাচে ডুবিয়ে দেয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .