অভিনন্দন: নতুন উদীয়মান কন্ঠেরা (রাইজিং ভয়েসেস)

রাইজিং ভয়েসেস এর নাগরিক মিডিয়া প্রসার প্রকল্পের প্রথম দলটি আমাদেরকে কিছু নতুন এবং শক্তিশালী কন্ঠের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে এমন সব কমিউনিটি থেকে যারা সচরাচর অনলাইন কথোপকথনে অংশগ্রহন করে না। গত মাসে আমরা আবারও আহ্বান করেছিলাম নতুন সিটিজেন মিডিয়া প্রসার প্রকল্প প্রস্তাবের জন্য যাদের আমরা ক্ষুদ্র সহায়তা দেব। এদের মধ্যে থেকে নতুন পাঁচটি প্রকল্প আমাদের বাংলাদেশ, বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ভারত এবং সিয়েরা লিওনে বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর সাথে যোগদান করবে।

আমরা মোট ৩৫টি দেশ থেকে ৬৩টি প্রকল্প প্রস্তাব পেয়েছিলাম। যদিও প্রস্তাবগুলো সংখ্যায় গতবারের চেয়ে কম (জুলাইতে আমরা ১৪২টি প্রস্তাব পেয়েছিলাম), বিষয়বস্তুর বৈচিত্র এবং গুণগমানে এবারের প্রায় সবগুলো প্রস্তাবই আকর্ষনীয় ছিল। ফলে আমাদের বাছাই প্রক্রিয়াটি বেশ শক্ত হয়ে যায়। এবারের রাইজিং ভয়েসেস ক্ষুদ্র সহায়তার প্রতিযোগীতায় আশানুরুপ সারা প্রমান করে যে নাগরিক মিডিয়ার প্রতি বিশ্বজুড়েই আগ্রহ রয়েছে; হোক সে উগান্ডার গ্রামান্চল বা ইজরায়েলের অর্থডক্স কমিউনিটি, গুয়াতেমালার পাহাড় থেকে সার্বিয়ার কর্মজীবি সমাজ।

নিন্মের পাঁচ বিজেতারা রাইজিং ভয়েসেসের উদ্ভাবনশীলতা, উদ্দেশ্য এবং সুনামের লক্ষ্যকে অবলম্বন করে বলে তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে:

নাকুরু, কেনিয়া: ইউথ মিডিয়া কনসাল্টেটিভ ফোরাম

ডেনিস কিলাম্বো, কলিন্স ওউদুর এবং রিপ্যাক্টেড সংগঠনের বাকী সদস্যরা কেনিয়ার নাকুরু শহরের বাইরের প্রান্তে বসবাসকারী নাগরিকদের শেখাবে কি করে স্থানীয় সংবাদ এবং গল্প সংগ্রহ করতে হয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের কাছে ছবি, ব্লগিং, ভিডিও এবং স্থানীয় প্রিন্ট ম্যাগাজিনের মাধ্যমে তুলে ধরতে হয়। রিপ্যাক্টেড তাদের সফল পথনাটক কর্মসূচীও (ম্যাগনেট থিয়েটার) চালিয়ে যাবে যাতে এই প্রকল্পে অংশগ্রহনকারীরা এইচআইভি আক্রান্ত কিভাবে হয় এ ধরনের নিষিদ্ধ বিষয় আলাপ করার জন্যে উৎসাহিত হবে। রিপ্যাক্টেড এর পূর্ণ প্রস্তাবটি আপনারা উইকি থেকে পড়তে পারেন।

ইরান ইনসাইড আউট: একটি ভিডিও ব্লগিং উদ্যোগ

সাঘাইয়েঘ আজিমি এবং তার সাথী ভিডিও ব্লগাররা তেহরানের ইয়থ সিনেমা সোসাইটির সাথে মিলে যুবা চলচিত্র নির্মাতাদের খুঁজে বের করবে এবং তাদের শেখাবে কি করে ছোট ছোট নাড়া দেয়ার মত ভিডিও চিত্র তৈরি করা যায় এবং ইন্টারনেটে প্রচার করা যায়। তার প্রস্তাবে সাঘাইয়েঘ লিখছেন “আমরা দুটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষ্য পূরন করতে চাচ্ছি, ১) ইরানের প্রান্তিক যুবাদের অনুপ্রানিত করা এবং বিশ্বের অনলাইন কমিউনিটি এবং বিশেষ করে ভিডিও ব্লগিং কমিউনিটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং কথোপকথনে উদ্বুদ্ধ করা এবং ২) মানবিক কাহিনীর মাধ্যমে ইরানের লোকদের সহনশীলতা বাড়ানো”। আপনি সাঘাইয়েঘের করা পিবিএস ফ্রন্টলাইন/বিশ্ব ওয়েবসাইটগুলোতে পূর্ববর্তী কাজগুলো দেখতে পারেন।

ব্লগারস দেসদে লা ইনফ্যান্সি (শিশু থেকে ব্লগার) – উরুগুয়ে

এমআইটি মিডিয়া ল্যাবের ফ্যাকাল্টি সদস্যদের করা প্রতিটি শিশুর জন্যে কম্পিউটার (ওএলপিসি-ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড) প্রকল্প আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে প্রভূত সারা পেয়েছে। এটির উদ্দেশ্য বিশ্বজুড়ে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে একটি স্বল্পমূল্যের ল্যাপটপ কম্পিউটারের সুবিধা দেয়া। কিন্তু আমাদের এখনও দেখার বাকী রয়েছে কি করে উরুগুয়ে, পেরু, নাইজেরিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলোর ছাত্রছাত্রীরা এই ছোট উজ্জ্বল সবুজ ল্যাপটপটি ব্যবহার করে। সেইবাল হচ্ছে একটি সরকারী সংগঠন যা উরুগুয়েতে ওএলপিসি ল্যাপটপগুলো বিতরন করবে। এই সংগঠনের পাবলো ফ্লোরে এইসব ল্যাপটপ ব্যবহারকারী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করবেন যেখানে দেশী ও আন্তর্জাতিক ক্ষ্যাতিমান ব্লগাররা শেখাবেন কি করে ব্লগ তৈরি করতে হয় এবং অন্যান্য সোশাল মিডিয়া টুলগুলো ব্যবহার করতে হয়। পরবর্তীতে এইসব নতুন ব্লগারদের জন্যে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে যাতে ব্লগাররা উদ্বুদ্ধ হয় তাদের কমিউনিটির গল্প ও অভিজ্ঞতাগুলো দেশী-বিদেশী শ্রোতা-পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে। পাবলোর পূর্ন প্রকল্প প্রস্তাবটি (স্প্যানিশ ভাষায়) উইকিতে রয়েছে।

মাদাগাস্কার- মালাগাসি ভাষার ফোরামের সদস্যদের নাগরিক মিডিয়ার জগতে নিয়ে আসা

সেরাসেরা হচ্ছে আন্তানানারিভো, মাদাগাস্কারকে ভিত্তি করে গঠিত একটি মালাগাসি ভাষায় ডিসকাশন ফোরাম যার প্রায় ৪০০ সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফোকো মাদাগাস্কার নামক সংগঠনটির মিয়ালী আন্দ্রিয়ামানানজারা, লোভা রক্তমালালা, হরিজন্কা এবং অন্যান্য সদস্যরা ফোরামের এই সক্রিয় সদস্যদের ব্লগ, পডকাস্ট এবং অনলাইন ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বের কমিউনিটির সাথে কথোপকথন শেখাবে। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী তারা জোর দিচ্ছে যে অংশগ্রহনকারীদের তারা “একটি কন্ঠ এবং ডিজিটাল ছাপ দেবে বিশ্ববাসীর সাথে কথোপকথনের জন্যে.. এবং এটি বিশ্বের জন্যেও একটি সুযোগ মালাগাসী চিন্তাধারা, কার্যকলাপ এবং বিশ্ব সম্পর্কে তাদের ধারনা সম্পর্কে জানার”।

একজন বন্দীর ডাইরী – জামাইকা

এই প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা কেভিন ওয়ালেন জানাচ্ছেন “গত দুই বছরে ২৬ লাখ জনসংখ্যার জামাইকা আন্তর্জাতকভাবে ‘খুনের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে প্রায় ১৪০০ এরও বেশী লোককে হত্যা করা হয়েছে এ শহরে।” জামাইকার এই অপরাধ সংস্কৃতির জন্যে দায়ী করা হয় গুন্ডা/মাস্তানদের (গ্যান্গ লিডারদের) প্রতি জনসাধারনের শ্রদ্ধাভক্তিকে। দ্যা ডাইরি অফ এন ইনমেট প্রকল্প এই ‘খারাপ লোককে শ্রদ্ধা করা'র সংস্কৃতিকে দুর করার চেষ্টা করবে জেলখানার বন্দীদের ব্লগ এবং পডকাস্ট করা শিখিয়ে। কেভিন জানাচ্ছে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য: “ব্লগিয়য়ের মাধ্যমে জেলখানার বন্দীরা তাদের গল্প পৃথিবীর মানুষকে জানাতে পারবে। তারা জেলখানার জীবনের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারবে এবং অপরাধ করলে ফলাফল কি হয় তা বোঝাতে পারবে। সাম্প্রতিক কালে জামাইকার সঙ্গীত এবং মিডিয়া এইসব গুন্ডা বা সট্টা বন্দীদেরকে রোল মডেল হিসেবে দেখায়। অনেক যুবারা মনে করে যে জেলখানায় থাকা খুব গর্বের ব্যাপার, যতক্ষন না পর্যন্ত তারা সত্যিটা নিজে গিয়ে জানতে পারে। দ্যা ডাইরি অফ এন ইনমেট প্রকল্প জামাইকানদের জানাবে যে দেশের উপচে পরা জেলখানাগুলিতে সত্যিকারের দুর্ভোগগুলো কি এবং এভাবে মিডিয়ার প্রচারিত ভ্রান্ত ধারনকে দুর করার চেষ্টা করবে।”

আমরা খুবই আনন্দিত এই পাঁচটি নতুন প্রকল্পকে রাইজিং ভয়েসেসের ক্রমবর্ধমান এবং পরিপক্ক কমিউনিটিতে স্বাগত জানানোর জন্যে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .