ইরান: নারীর উপর আবার অত্যাচার

ইরানী পুলিশ নারীদের পোশাক কোড বলবতের জন্য রাস্তায় অভিযান শুরু করেছে। ১৯৭৯ এর ইরানী বিপ্লবের পর থেকে ইরানী নারীদের আইনগতভাবে চুল ঢেকে রাখতে হয় এবং লম্বা, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হয় শরীর ঢেকে শিষ্টতা রক্ষার জন্যে।

হাজারো ইরানী নারীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে তাদের পোশাক পুরোপুরি ইসলামিক না হওয়ার কারনে (অপর্যাপ্ত হিজাব)। আর শ'য়ে শ'য়ে নারীরা গ্রেফতার হয়েছেন স্মরনকালের সবচেয়ে কড়া এই অভিযানে।

অনেক ব্লগ সাইট এবং খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ত এই অভিযানের নিন্দা করেছেন। ইরানী ব্লগাররা অবসম্ভাবীভাবে এই অভিযান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং ক্রন্দনরত নারীদের ছবি ও ভিডিও তুলে ধরেছেন। কেউ কেউ স্মরন করিয়ে দিয়েছেন যে রাস্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ তার নির্বাচনী অভিযানে বলেছিলেন যে নারীদের পোশাকজনিত কোন অভিযান চালানো হবে না। নিকাহাঙ একজন নামকরা কার্টুনিষ্ট এবং ব্লগার তার এক কার্টুনে এই প্রতিজ্ঞাভঙের ব্যাপারটি উপস্থাপন করেছেন –আহমাদিনেজাদ তার প্রতিজ্ঞাগুলোর দিকে তাকিয়ে বলছেন “এটা আমি বলিনি”।

ক্রন্দনরত নারী

কোসুফ একটি ভিডিও তুলে ধরেছেন যখানে একজন নারীকে পুলিশ কর্তৃক জোরপূর্বক একটি গাড়ীতে তোলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। মহিলাটি চিৎকার করে কাঁদছেন- “আমি গাড়ীতে উঠবনা”

নির্বাচনের জন্যে ভাল

মোহাম্মদ আলী আবতাহী, ইরানের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বলছেন:

গ্রীস্ম আসছে এবং অন্যবারের মতই নারী এবং তাদের হিজাবের ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। কিন্তু যারা অপর্যাপ্ত হিজাবের জন্যে শাস্তপ্রাপ্ত হলেন এদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলাই নির্বাচনের সময় খুব গুরুত্বপুর্ন হয়ে যান। তখন টিভি চ্যানেলে নির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত সংবাদে এদের সাক্ষাৎকার প্রচারের জন্যে হিড়িক পড়ে যায়। টিভির পর্দায় কিন্ত এরা স্বচ্ছন্দে স্বরুপে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন।

১৯৭৯ সালের পুর্বে:

আজারমেহর লিখছেন:

নীচের ছবিগুলোতে অপর্যাপ্ত হিজাব পড়া নারীদের উপর অভিযান দেথানো হয়েছে। ইরানী মহিলারা যেভাবে তাদের হিজাব মাথায় জড়ান এবং সুন্দরভাবে তাদের কিছু পরিমান চুল প্রদর্শন করেন একে অধিকাংশ সময়ই ইসলামী রিপাব্লিকের ধামাধারীরা রাষ্ট্রীয় উদারতার চিন্হ হিসাবে প্রশংসা করেন। তারা ইচ্ছে করেই ভুলে যান যে ১৯৭৯ সালের পুর্বে এমন কিন্তু ছিলনা।

গায়ের জোরে স্বর্গ সৃষ্টি:

হানুজ স্মরন করছেন ৮০ সালের সেই অন্ধকার দিনগুলির কথা যখন দৈনিক দমন প্রক্রিয়া চালানো হতো। এই ব্লগার লিখছেন আমরা বিশ বছর আগে ফিরে যাচ্ছি যখন ইরানী রাষ্ট্র তাদের স্বর্গের ধারনা প্রতিষ্ঠার জন্যে প্রপাগান্ডা ও গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য নিত। তিনি বলছেন এই ফিরে যাওয়া বেশ কষ্টকর যখন রাষ্ট্র গত ২০ বছরে তার অর্থ ও শক্তি ব্যয় করেছে তাদের মতাদর্শ অনুযায়ী একটি নতুন প্রজন্ম গড়ে তুলতে এবং সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে ওই একই প্রজন্মকে দমন করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

তালেবানিজম

আলপার লিখছেন যে রাস্তায় নারীদের বিরূদ্ধে অভিযান আইনসিদ্ধ, যুক্তিযুক্ত বা ইসলামিক নয়। ইরানী সমাজ এবং তালেবানিজম এর মধ্যে পার্থক্য কি? মাত্র ১০ সেন্টিমিটার। সংঘাত এবং ঘৃনা হচ্ছে দুটি সাধারন বিষয় যা তালেবান ও নারী অত্যাচারীদের মধ্যে দেখা যায়।

রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার জন্যে বিপদ্জনক

জমহুর বলছেন যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অপর্যাপ্ত হিজাব পরিহীতাদের ছবি তুলে তাদের ডাটাবেজে রাথছে। মাদক পাচারকারীর মত জঘন্য অপরাধীদেরও এমন করা হয় না। কিছু সংবাদপত্র এই অভিযানের বিপক্ষে লেখায় তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবিষয়ে নাক না গলাতে। এই ব্লগার বলছেন যে কিছু অথরিটি এমনও বলেছেন যে এইসব নারীরা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার জন্যে বিপদ্জনক।

কোরানে কি হিজাবের কথা বলা আছে?

কামান্গিরের বদৌলতে আমরা জানতে পারছি যে কিছু রক্ষনশীল ব্লগারও নারীদের বিরুদ্ধ সরকারী এই অভিযানের বিপক্ষে কথা বলেছেন। কুরোশ  জানেননা হিজাবের এই বর্তমান চলটি কে শুরু করেছেন। ইতিহাস বা হজরত মোহাম্মদ সা: এর জীবনী কোথাও এর বর্ননা নেই। যদিও হিজাব আদেশমুলক হয়ে থাকে (এটি কিন্তু নয়) এটি কিন্তু রক্ষনশীলরা যেমন ভাবে বর্ননা দিয়ে থাকেন তেমন রীতির নয়। তারা কোরান এবং জ্ঞানীদের দোহাই দিয়ে বলেন হিজাব অবশ্য পালনীয়। যদিও আমি অনেক খোজার পর কোরান বা হাদিস কোথাও এর বর্ননা পাইনি।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .